• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বিএনপি কী আগের পথেই হাঁটছে!

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম

বিএনপি কী আগের পথেই হাঁটছে!

ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

অতীতের ‘পাপ’ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে সারাক্ষণ যেন তাড়া করে ফিরছে। আন্দোলন করছে কিন্তু দলটি কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না।

অতীতের পাপ শুধু তাদের নয়, সাধারণ মানুষও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাদেরও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনও ভয়ে গা শিউরে ওঠে।  শেখ হাসিনার সরকারকে হঠানোর জন্য কি না করেছে। সরকার হঠানোর জন্য ৯২ দিন ধরে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান এবং ৮৯ দিন ধরে চলা নেতিবাচক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্নভাবে নাশকতা চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। তাদের জ্বালাও পোড়াও অভিযানে প্রায় দেড়’শ মানুষ মারা যায়।  শুধু পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে ৭০ জন। পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রায় এক হাজার নিরীহ মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। সে সব কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার করার পর সেসব মানুষের পরিবারগুলো যে কষ্ট পাচ্ছে, যারা পুড়েও বেঁচে আছে, তাদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আর ওদের (বিএনপির) সঙ্গে বসতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয়, ওদের সঙ্গে বসলে আমি পোড়া মানুষগুলোর গন্ধ পাই।’

রাজধানীতে একাধিক স্থানে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ - Bhorer Kagoj

তাদের এ কর্মসূচি চলাকালে সহস্রাধিক যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  ভাংচুর করা হয় কয়েক হাজার যানবাহন। আন্দোলনের নামে চলন্ত যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, রেলে আগুন দেওয়া, রেললাইন উপড়ে ফেলা- যেসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তারা চালিয়েছেন তাতে সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।  এসব কারণে সাধারণ মানুষ বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া বাধা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে পরিচালিত সহিংস আন্দোলন বিএনপির রাজনীতিকে সীমাহীন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।  গত প্রায় এক দশক ধরে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে শুধু জোটবদ্ধ রাজনীতি করছে না, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নিয়ে জামায়াত যে অপরাধ করেছে, তার দায়ও বিএনপি তাদের কাঁধে নিচ্ছে। অথচ একাত্তরের কোনও দায় বহনের যৌক্তিক কারণ বিএনপির নেই। একাত্তরে বিএনপি নামক দলটির অস্তিত্বই ছিল না। তাছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকারই জিয়াকে বীর উত্তম উপাধি দিয়েছে।  কাজেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এখন বিএনপি যে রাজনীতি করছে সেটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।  বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পরে হলেও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বিএনপি এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত না জানিয়ে যেভাবে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে প্রকারান্তরে বিরোধিতা করেছে, সেটা বিএনপির রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থানকে দেশের মানুষের সামনে দুর্বল করে তুলেছে।  মানুষ মনে করছে, বিএনপি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করলেও কার্যত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন করে রাজনৈতিক অসততার পরিচয়ই দিয়েছে।

রাজধানীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে যে সহিংস কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল বিএনপি তারও বিরোধিতা করেনি। বরং জোট সঙ্গী হিসেবে জামাতের কর্মসূচীর প্রতি বিএনপির এক ধরনের নৈতিক সমর্থন ছিল বলেই মানুষের কাছে মনে হয়েছে।  বিএনপি কখনোই নিজেদের জামায়াতের থেকে আলাদা করতে চায়নি। শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর জামায়াত এখন অনেকটাই ‘বিধ্বস্ত’ একটা দলে পরিণত হয়েছে।  এই ‘ধসে যাওয়া’ জামায়াতের ওপর বিএনপির নির্ভরতা যে দলটিকে ক্রমেই দুর্বল করে ফেলছে এটা যদি এখনও উপলব্ধিতে না আনা হয় তাহলে বলতে হবে দলটির জন্য কোনও সুসংবাদ সহসাই অপেক্ষা করছে না!

আওয়ামী লীগ সংবিধান রক্ষার একটি নির্বাচন করেও বৈধতা পেয়েছে বিএনপি-জামায়াতের এই নজিরবিহীন সন্ত্রাসের কারণে।  এসব সন্ত্রাসের কাহিনি সব আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেই ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। যার কারণে কানাডার ফেডারেল আদালত দলটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।  বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জুডিশিয়াল রিভিউয়ের আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে বহাল রেখে কানাডার ফেডারেল আদালতের বিচারক এই মন্তব্য করেন।

মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের এক ব্যক্তি বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর পরিচয় দিয়ে ক্যানাডা সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন।  তার স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের আবেদন ২০১৫ সালে প্রাথমিক অনুমোদন পেলেও ২০১৬ সালের ১৬ মে তাকে ‘কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা’ করেন দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তা।  ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কানাডার ফেডারেল আদালতে বিচারিক পর্যালোচনার আবেদন পরবর্তীতে খারিজ করে রায় দেন বিচারক হেনরি এস ব্রাউন।  অভিবাসন কর্মকর্তা তার সিদ্ধান্তে বলেছিলেন, আবেদনকারী জুয়েল হোসেন গাজী এমন একটি সংগঠনের সদস্য, যে দল ‘সন্ত্রাসে যুক্ত বলে মনে করার যৌক্তিক কারণ আছে’।  সুতরাং কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্ট (আইআরপিএ)-র ৩৪(১)-এর এফ ও সি ধারা অনুযায়ী তিনি সুরক্ষা পাওয়ার জন্য ক্যানাডায় বসবাসের স্থায়ী অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নন।

দিনভর সংঘর্ষে ২০ পুলিশ আহত, ৯০ জন আটক

কানাডার আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি এমন কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, যে সংগঠন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিল, আছে বা ভবিষ্যতে থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে, তাহলে তিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে ক্যানাডায় প্রবেশের অনুমতি পাবেন না।  সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার আবেদনে জুয়েল গাজী দাবি করেছিলেন, বিএনপি সন্ত্রাসকে ‘প্রশ্রয় দেয় না’ এবং দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও নজির রয়েছে।  কিন্তু অভিবাসন কর্মকর্তার তুলে ধরা লাগাতার হরতাল ও সহিংসতার বিবরণ তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করলে আবেদনকারীর যুক্তি ‘হারিয়ে যায়’।

বিএনপিকর্মীরা ভাংচুর চালায়, হাতবোমা ছোড়ে: পুলিশ

সরকার পতনের নামে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আবারও সেই জালাও পোড়াও শুরু করেছে। 
দেশবাসী আবারও বিএনপির ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাসের রূপ দেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ যেন দেশের ক্ষতি না করতে পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, যে কোনো ধরনের নৈরাজ্য মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক আছে। আন্দোলনের নামে জালাও পোড়া বরদাশত করা হবে না।

গতকাল তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের ফেসবুকের একটি অডিওতে শোনা যায়, ‘তোমরা আগুন ধরাও, এগুলো আমাদেরকে দেখাতে হবে, জায়গা মতো দেখাতে হবে।’

NewsArchive: সময় নিউজ - বিএনপি কী সেই পুরোনো রূপেই ফিরছে?

জায়গাটা কোনটা সেটা তিনি (নিপুণ রায়) নিজে জানেন। দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানোর হুকুম তিনি দিচ্ছেন। সব জায়গা থেকে বিএনপির নেতারা এ ধরনের কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সব জায়গা থেকে বিএনপি নেতারা অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি মন্তব্য করে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের যে অপতৎপরতা তা আবারও আমাদেরকে পেছনে ফেরার লক্ষণ দেখাচ্ছে, এটি নিশ্চয় দেশের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। এসময় তাদের কর্মকাণ্ড দেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিবে।

এদিকে, রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালবলেছেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। ভোট হবে ডিসেম্বরের শেষে।

সরকারের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, তারা বিএনপির সেই আগের রুপ দেখতে পাচ্ছেন। যেটা ভালো লক্ষন নয়।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ