প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৩, ০২:৩৪ এএম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজপথ। কর্মসূচী আর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সরগরম রাজধানী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং তাদের সহযোগী সংগঠনর পদচারণায় মুখরিত রাজপথ। আর তাতে করেই হঠাৎ করে রাজনীতি অঙ্গন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে জ্বালাও পোড়াও, ধর-পাকড়। এমন কি ঘটছে মৃতু্্যর ঘটনাও। একদল সমাবেশ ডাকছে, অন্য দলও পিছিয়ে থাকছে না। মূলত সমাবেশ আর পাল্টা সমাবেশ ডাকাডাকিতে দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক মাঠ আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। তাই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এর অংশ হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা চট্টগ্রামে সমাবেশ করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যালট প্যানেলের সুরক্ষা ছিল না। ব্যালট প্যানেল দখল করে ভোট চুরি করা হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ ভোট নিজেরা দিয়ে ভোট ডাকাতি করেছেন।
একই ধরণের অভিযোগ করেন ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হিরো আলম। ফলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আন্দোলনে মেনেছে। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার নয়াপল্টনে দলীয় অফিসের সামনে বিএনপি মহাসমাবেশের ডাক দেয়। একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে। মূলত বিএনপি মহাসমাবেশ করতে চেয়েছিল বৃহষ্পতিবার। কিন্তু একই দিন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। পরে সংঘাত এড়াতে বিএনপি একদিন পিছিয়ে দেয়।
বিএনপির মতো বৃহস্পতিবারের (২৭ জুলাই) নির্ধারিত সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার (২৮ জুলাই) করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। বিএনপির সমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের এ কর্মসূচিকে কোনোভাবেই পাল্টাপাল্টি বলতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। এ ব্যাপারে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বিএনপিকে উদ্দেশে করে বলেন, আপনারা (বিএনপি) ডেকেছেন সমাবেশ আর আমাদেরটা হলো তারুণ্যের জয়যাত্রা। এখানে পাল্টাপাল্টি হলো কী করে? কোথায় পাল্টাপাল্টি হলো?
মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকায় সব প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা দেয় বিএনপি। তাদের এ কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, অবস্থান নিলে আপনাদের চলার পথও বন্ধ করে দেবো। আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তিনি বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করবেন, আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেবো। চোখ রাঙাবেন না, দেশি-বিদেশি যারাই চোখ রাঙাবেন তাদের বলে দিচ্ছি, আমাদের শেকড় অনেক গভীরে। চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না। আপনারা (নেতাকর্মীদের) হতাশ হবেন না, কারও চোখ রাঙানোর পরোয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা করেন না।’ এর ফলে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে মানুষ ব্যাপক আতঙ্কিত হয়।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীর বিষয়ে শুধু হুমকি দিয়েই থামেনি আওয়ামী লীগ। তারাও পাল্টা কর্মসূচী দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচী থেকে সরে আসে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তবে রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেয়। প্রতিটি থানা ওয়ার্ড কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকেন। সেই সঙ্গে রাজপথের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ জলকামান, এপিসি গাড়ি নিয়ে অবস্থান নেয় এবং টহল দেয়। ঘটে ধাওয়া এবং পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এসব ঘটনায় বিএনপির দুই সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায় এবং আমানউল্লাহ আমান আহত হন। গয়েশ্বর রায়কে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়। থানায় তাকে খাওয়া দাওয়া করানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর হাসিমুখে ডিবি প্রধানের সঙ্গে বিভিন্ন পদের খাবার খাচ্ছেন। ডিবি প্রধান তার অতিথির পাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। খাবারের তালিকায় খাসি ও মুরগির মাংস, একাধিক মাছের তরকারি, রোস্ট ও সবজি এবং মৌসুমি ফলের মধ্যে আম, মালটা, আঙুর ও ড্রাগন ফল দেখা যায়। অন্যদিকে আমানউল্লাহ আমান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার দাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এদিকে গয়েশ্বর ছাড়া পাওয়ার পুলিশের বিপক্ষে নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত তাকে পেটানো হয়েছে। অন্যদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিল তখন ধাওয়া খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পরে তাকে সেভ করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
মোহাম্মদ হারুন আরও বলেন, ‘আমরা আগে থেকে আঁচ করেছিলাম যে, তারা কোনো একসময় অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তারা প্রতিবারই প্রোগ্রাম করার আগে অনুমতি গ্রহণ করে। তাদের অনুমতি দেওয়াও হয়। এরপর নৈরাজ্য চালায়। আজ ঢাকার চারপাশ বন্ধ করে তারা যে বসে পড়ার কর্মসূচি নিয়েছিল, তার কোনো অনুমতি নেই বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জানান ডিএমপি কমিশনার।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ থাকবে না। বিশেষ করে ভোটাধিকার না থাকায় নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আসা না আসা নিয়ে চিরাচরিত নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে। এখন সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে যে অবিশ্বাস তাতে আলোচনার পথ অনেকটাই রুদ্ধ বলা যায়। রাজনীতির যে কোনো বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান না হলে রাজপথেই এর সমাধান হয়, এটাই সব সময় দেখা যায়।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন