প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় দেশের বড় দুই দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের অনড় অবস্থানে সমঝোতার ন্যূনতম সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনীতি এখন রাজপথে। মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে পালটাপালটি কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা।
এবার দল দুটির টার্গেট ঢাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সরকারের পদত্যাগে ২৭ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলনে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখলে রাখতে চায় তারা। অন্যদিকে বিএনপিকে প্রতিহত করে ঢাকার রাজপথে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীনরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর রাজপথসহ প্রায় সব কিছুই ক্ষমতাসীন দলের দখলে। রাজধানীতে দলটির অবস্থান আরও শক্তিশালী। কয়েকবার আন্দোলন করেও বিএনপি রাজপথ দখলে নিতে পারেনি। এবার ফের চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে রাজপথের দখল ছাড়বে না তারা।
দলটি মনে করে, সরকারের পতন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুলের লক্ষ্যে ২৭ জুলাই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। ২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর যে চেষ্টা চালিয়েছিল, তাও মাথায় আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। এসব বিষয় সামনে রেখেই ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
এদিন শাসক দল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় চলছে প্রস্তুতি সভা। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। কালকের সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মহানগরের প্রতিটি অলিগলিতে সতর্ক নজরদারি করতে বলা হয়।
ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কমপক্ষে শতাধিক বাস ছেড়ে আসবে ঢাকায় মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে। বাসগুলো যাতে নেতাকর্মী দ্বারা ভর্তি থাকে, এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে রাজধানীর কোনো স্থানে অবস্থান নিতে না পারেন, সেজন্য মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে পাহারায় থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
সমাবেশের দিন ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে শহিদ নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে সমাবেশস্থলে আসবে। যুবলীগ আসবে গোলাপশাহ মাজারের দিক থেকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিক থেকে এসে যোগ দেবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে এই সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। এর আগে এ কর্মসূচির নাম ছিল তারুণ্যের জয়যাত্রা।
যুবলীগ এককভাবে এ দিন ঢাকায় সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু রোববার রাতে এ কর্মসূচির নাম পরিবর্তন করা হয়। সেই সঙ্গে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে। যৌথভাবে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বৃহস্পতিবার সমাবেশে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। কিন্তু সমাবেশের নামে বিএনপি কোনো সহিংসতা করলে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/