• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
তিন মাসের কর্মসূচি ঘোষণা

সরকারবিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলনের সমর্থন

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০২:৩৩ এএম

সরকারবিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলনের সমর্থন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি আগামী তিন মাসের দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার (১৫ জুলাই) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতির প্রবর্তন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

ঘোষিত তিন মাসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– ১৬ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সব থানায় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন, সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী সব জেলা ও মহানগরে সমাবেশ, ওলামা সম্মেলন ও সরকারের পদত্যাগ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে সমাবেশে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশে কর্তৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে দিনের ভোট রাতে গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হত্যা করেছে। কথিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে’ চলমান রাজনৈতিক সংকটকে উসকে দিয়েছে। দেশের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের নামে জাতির সাথে প্রহসন না করে দলীয়ভাবে বিজয়ী ঘোষণা দিলেই হয়, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করার কী দরকার? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাপ্রেমী। তাই যেকোনোভাবে তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দেশ আমাদের, নির্বাচনও আমাদের। সুতরাং আমার দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কীভাবে হবে? এখানে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে রাষ্ট্র ও নির্বাচন পরিচালিত হবে না। দেশের মানুষ নানা সংকট ভোগ করছে। নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত।

তিনি বলেন, জাতীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ন্যায় কলঙ্কিত নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চায়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, আওয়ামী সরকার দেশকে অকার্যকর করে বিচার ও আইন বিভাগকে ধ্বংস করেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকেও ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ বার বার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অথচ তারাই নিজেদের স্বার্থে বারবার সংবিধান পরিবর্তন করেছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।

প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পুরো মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সরকার বিগত নির্বাচনগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চায়। অর্থ লুটপাট, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থ পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। তারা উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়ন করেছে। তিনি এক দফার আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশের জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মানুষ হাহাকার করছে। দুর্নীতি, ঘুষ, চুরি-ডাকাতির উন্নয়ন হয়েছে। সর্বত্র ঘুষ ও দুর্নীতিতে সয়লাব।

যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সরকার দেশকে অকার্যকর দেশে রূপান্তর করেছে। ৫৩ বছর পরও দেশের জনগণ ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।

সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দুই মেয়রের সমালোচনা করে বলেন, মেয়রদ্বয় কোনো উন্নয়ন না করলেও বিল্ডিং ভাঙাতে সফল হয়েছেন। বসবাসযোগ্য নগরী গড়তে তারা ব্যর্থ। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ উত্তরের মেয়র কলাগাছ থেরাপিতে ব্যস্ত।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উপদেষ্টা আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলাম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমসহ অন্য নেতারা।

 

বিএস/

আর্কাইভ