প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৩, ০১:৫৯ এএম
আওয়ামী লীগের সরকার বৈধ সরকার নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তারা সাংবিধানিকভাবেই অবৈধ।
সোমবার (৩ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ খালিদ হাসান জ্যাকীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
তিনি বলেন, সংবিধানে বলা ছিলো-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু তারা যখন ক্ষমতায় এসে দেখলো জনগণ তাদেরকে দ্বিতীয়বার ভোট দেবে না, তখন তারা সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে- দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। ভোট তো দিতে দেয় না, নিরপেক্ষ হবে কীভাবে।
প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই বলা শুরু করেছে নৌকায় ভোট দেন। কিন্তু মানুষ গান গাইতে শুরু করেছে- আগে জানলে এই ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। মানুষ আর ভাঙা নৌকায় উঠবে না। দেশের মানুষ অবশ্যই নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেছে শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার থাকলে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তাই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
আওয়ামী লীগ এখন থেকে কারসাজি শুরু করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ ভাইদের বদলি করে। এসপি-ডিসি বদলি করে। ডিআইজি বদলি করে। ইউনো বদলি করে। কোনটা তার নিজের সেটাও বুঝতে পারে না। সব নিজের লোক বসাতে চায়। এটাই হয়, যখন পতনের সময় আসে কেউ নিজের লোক থাকে না।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এবার ভয় পাইছে। ভালো রকমের ভয় পাইছে যে কথাবার্তায় সামাল দিতে পারে না। এমন-এমন কথা বলে যা সার্বভৌমত্বের বাইরে চলে যায়। আমেরিকা থেকে এসে এতো ভয় পাইলো যে বললেন, আমাকে ২ মিনিটের মধ্যে সরায় দিতে পারে। আবার বললেন- সেন্টমার্টিন দিয়ে দিলে আমাকে ক্ষমতায় রাখবে। এটা কি কারও বাবার দেশ, বাবার সম্পত্তি কারও? সেন্টমার্টিন এই দেশের মাটি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। এটা কারও পক্ষে বিক্রি করে দেওয়া এতো সহজ নয়। দেশের প্রতিটি মানুষ তা রক্ষা করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত একমাসে ৩৮৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুতরাং প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের কোনও বিকল্প নেই। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, মরিচের অনেক দাম বেড়েছে। এক হাজার টাকা। মরিচেরতো খুব ঝাঁজ থাকে। ওই ঝাঁজ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ্য করতে পারছেন না। আজকে চাল, ডাল তেল, লবণসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আজকে এক মন ধান বিক্রি করে এক কেজি মরিচ কেনে। আর উনি ভয় পেয়েছেন, এই অবৈধ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব আর কতদিন করতে পারবেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাতে কি আন্দোলন ঠেকানো যাচ্ছে? তখন নেতাকর্মীরা উত্তর দেন- না। গ্রেফতার করে আন্দোলন ঠেকানো যাচ্ছে? আন্দোলন হচ্ছে আমাদের প্রাণের দাবি।
আমাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতা আনার জন্য নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা দলকে পরিবর্তন করে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নয়। দেশের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে ফেতে চায়। সেটা কি ভোটের অধিকার, বাঁচার অধিকার।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কথা খুব পরিষ্কার, অবিলম্বে পদত্যাগ করেন। কারণ যত দিন যাবে ততই দেশ ও মানুষের ক্ষতি হবে। ততই গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সংসদ বিলুপ্ত করেন। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই বলেন না কেনো, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা দেন- তারা একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করবে। এটাই একমাত্র পথ, আর কোন পথ নাই। তা না হলে তখন পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না। কারণ সময় আর থাকবে না সময় শেষ হয়ে গেছে।
সমাবেশ শেষে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শান্তিনগর ঘুরে আবার পল্টন এসে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
বিএস/