প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩, ০১:১৪ এএম
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল প্রত্যাহার, বাজেটে অনুৎপাদনশীলখাতে ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ এ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে তোপখানা রোড, নূরহোসেন স্কয়ার, গুলিস্তান হয়ে বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর ঘুরে সেগুনবাগিচাস্থ দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সহসভাপতি শ্রমিক নেতা ওসমান আলী, মহিলা ফোরামের নেতা রুখসানা আফরোজ আশা, ছাত্রনেতা মুক্তা বাড়ৈ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জুলফিকার আলী।
সমাবেশে নেতারা বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ৯০ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ তাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলেছে। বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন এক দুর্বিষহ অবস্থায় নামিয়ে এনেছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বিদ্যুৎকে ঋণ ও ভর্তুকি নির্ভর করা হয়েছে। ফলে মানুষ এখন ৮ বছর আগের তুলনায় চারগুণ দামে বিদ্যুৎ কিনছেন।
তারা বলেন, সরকার অত্যাবশ্যকীয় বিল এনে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের শেষ হাতিয়ার ধর্মঘট করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে। ১৯৫২ সালের এবং ১৯৫৮ সালের পুরনো আইনকে নতুন করে ফিরিয়ে এনে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি শাসকদের পথে হাঁটছে। এ আইন ৭ কোটি ৩৪ লাখ শ্রমিকের অর্জিত অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তারা আরও বলেন, চাল, তেলসহ সব নিত্যপণ্য দফায় দফায় বাড়ছে। এতে মানুষের জীবনে চরম সংকট নেমে এসেছে। শতকরা ৬৮ ভাগ মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এবারের বাজেটে সরকার শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষাখাতসহ উৎপাদনমুখী খাতগুলোতে বরাদ্দ না বাড়িয়ে সামরিক ও প্রতিরক্ষার মতো অনুৎপাদনশীল খাতগুলোয় বরাদ্দ বাড়িয়েছে। করের আওতা সম্প্রসারণ করে জনগণের ওপর ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বিপদে আছে শ্রমজীবী মানুষ। তাদের আয় বাড়েনি কিন্তু খরচ অনেক বেড়েছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের শেষ অস্ত্র ধর্মঘট। কিন্তু অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিলের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের শেষ অস্ত্রটাও কেড়ে নিচ্ছে।
বাসদ নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, তা আমরা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন দিয়েও বুঝতে পারি। সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন বরিশালের একজন প্রার্থী আহত হলে বলেন, ‘তিনি তো ইন্তেকাল করেননি’। এ সিইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চাই এবং নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি জানাই।
বিএস/