• ঢাকা সোমবার
    ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‍‍`রাতের ভোট ‍‍` তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী: জয়

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম

‍‍`রাতের ভোট ‍‍` তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী: জয়

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে করে যাচ্ছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। একইসঙ্গে ‘রাতের ভোট’ তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে সম্প্রচার করা প্রায় ৩৫ মিনিটের এক ভিডিও পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

ভিডিওতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সারাদিন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে এবং বিএনপি নেতারাও সন্তোষ প্রকাশ করছেন। কোনো কারচুপি বা অনিয়মের কথা তারা বলেননি। বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরাও নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু বলে রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার পরেই ভোল পাল্টে যায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কামাল হোসেনদের। তারা তাদের ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য দিতে থাকেন।

মির্জা ফখরুল-কামাল হোসেনরা নির্বাচনী কারচুপির যে অভিযোগ তুলেছিলেন, ঘটনার সাড়ে চার বছর পার হয়ে গেলেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই একই বুলি আউড়ে যাচ্ছেন। এছাড়া, ওই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির কারণ বিএনপি নিজেই বলেও জয়ের শেয়ার করা ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, দেখানো হয়েছে বেশকিছু কারণও। 

এ ভিডিওটি মূলত তৎকালীন সময়ের কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে, সকাল থেকে সারা দিন ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা ইভিএমে ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। বিএনপি নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করছেন। বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরাও নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু বলে রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বিভিন্ন স্থানে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত জোটের কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন।
 
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অভিমত
সেসময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সব দলের প্রতিনিধিদের দেখেছেন বলে জানান সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষক তানিয়া ডন ফস্টার ।

রাজধানীর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সাথে পাঁচটি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

ভোটের দিন সকালে রাজধানীর গুলশানের মানারাত স্কুল কেন্দ্র এবং বাড্ডার কালাচাঁদপুর স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন পর্যবেক্ষকরা কেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং ভোটার উপস্থিতি দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেন। গণমাধ্যমগুলোতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও ভোটের পরিবেশের প্রশংসা করেন। এছাড়া কানাডা, ভারত ও নেপালের ৫ সদস্যের পর্যবেক্ষক দল সারাদিন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে কোনো অনিয়ম পাননি।

ভোট ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং সন্ধ্যায় বদলে যাওয়া বিএনপি জোটের ভাষ্য
মূলত বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, মানুষের জমি দখল, নারীর ওপর সহিংস আচরণ, লুটপাট ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশজুড়ে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে হত্যা, মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার সেই দুঃস্বপ্ন কেউ ভুলতে পারেনি। তাই বিএনপি নির্বাচনের আগে গণমানুষের কাছে ভোট চাইতে যেতে পারেনি। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে দলটি। 

ফলে নির্বাচনে জয়ী হতে অনেক স্থানে ভোটের দিন কারচুপির ওষুধ ব্যবহার করে জেতার নীল নকশা তৈরি করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের কারণে ভোট সুষ্ঠু হয়। এতে পরাজয় দেখে সন্ধ্যায় বদলে যায় তাদের অবস্থান। রাতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেন দলটির নেতারা। অথচ রাতভর কেন্দ্র কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল বিএনপির নেতাকর্মীরাই। 

ভোটের আগের রাতে এবং ভোট চলাকালে কয়েকটি স্থানে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ভোটের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র দখল করতে গিয়ে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও রাইফেল ছিনতাই করে। 

নোয়াখালী-২ আসনের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার লুট ও ভোটকেন্দ্রে হামলা করে ছয়জনকে আহত করে বিএনপি সমর্থকরা। ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আনসার সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে কুমিল্লায় ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং পুলিশের পিকআপে হামলা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জয়ের ফেসবুকে শেয়ার করা ভিডিওতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা হয়, যেসব কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঝামেলা করার চেষ্টা করেছে, সেসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে নোয়াখালীসহ ২২টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এছাড়াও নির্বাচন চলাকালে ভোটকেন্দ্রে হামলা করে ১১ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির একজন মারা যায়।

বিএনপি নেতাদের নাশকতার পরিকল্পনা
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রাক নির্বাচনের মতামত যাচাইয়ের জন্য জরিপ পরিচালনা করে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। জরিপের ফলাফলে আওয়ামী লীগের বড় বিজয়ের সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। বলা হয়, আওয়ামী লীগ ২৪৮টি আসনে জয়ী হতে পারে এবং বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৪৯টি আসনে জয় পেতে পারে।

এরপরই নাশকতার পরিকল্পনা করে ভোটকেন্দ্র দখল করে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে নির্দেশ দেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। তাদের কল রেকর্ড ফাঁস হলেও এসব তথ্য জানা যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, বরিশালের উজিরপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ শান্ত। তিনি থানার ওসিকে ফোনে বলেন, ‘আমি আসব, আমার সামনে যেটা পড়বে আমি গুলি করে দেব। মাঠ ক্লিয়ার কর।’

রাজশাহীর বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারার নির্দেশ দেন। কর্মীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘সুযোগ পাইলে বসায় দাও, মাইরা ফালায়া দাও।’

নোয়াখালী-১ আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়ে ভোটের আগে কেন্দ্র দখলের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন তার ঘনিষ্ঠ এক নেতাকে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মেরে মাঠ ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়ে তিনি নিজের লোকজনদের বলেন, ‘কাল রওনা দেব। বাঁশ সব কেটে নিতে বলো, সব রেডি করতে বলো।’


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ শিবিরের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। হাফিজ বলেন, ‘শিবিরের ছেলেদের এজেন্ট দেবে। আমরা ওদের সবাইকে নিয়ে নেব, ভোটের দিন কাজে লাগবে সেই ব্যবস্থা কর।’ বাবুল বিশ্বাস নামে একজনকে ভোটের আগের দিন নাশকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির নির্দেশ দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন।

প্রতিবেদনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং কুমিল্লা তিতাস জামায়াতের আমির শামীম সরকারের একটি ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনাও প্রকাশ হয়।

নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির কারণ
সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেয়ার করা ওই ভিডিও প্রতিবেদনে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির কিছু কারণও দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের অভাব, যোগ্য প্রার্থী দিতে ব্যর্থতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এজেন্ট দিতে না পারা, সিনিয়র নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা, জনসংযোগ না করা, বিজয়ের মাসে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দেয়া, কিছু আসনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া এবং নিজেদের জনগণের সামনে তুলে ধরতে না পারা।

এছাড়াও, বিএনপি জোটের সিনিয়র নেতারা যার যার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে সঠিক সময়ের সঠিক নির্দেশনা পায়নি তৃণমূলের নেতারা। সিনিয়র নেতারা বারবার নেতাকর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মাঠে নামার নির্দেশ দিলেও তারা মাঠে নামেনি। ফলে প্রার্থী ও নেতাদের মাঠে না পেয়ে সাধারণ ভোটাররা অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাননি, যার প্রভাব পড়ে ফলাফলে। পরাজয়ের পেছনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী ছিল।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ভোটের মাঠে অনভিজ্ঞ-অপরিচিত ও রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় অনেককে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ভোটের মাঠে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী রচিত সংস্কারপন্থি ও অন্য দল থেকে এনে অনেককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ আসনে একাধিক প্রার্থী রেখে ধানের শীষের প্রাথমিক মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে বিএনপি। 
 

যেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা প্রত্যেকটি আসনে দুই জন করে প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিচ্ছি। কোনো কারণে একজনের না হলে, পরেরজন যাতে সুযোগ পান।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই কথায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিএনপির মনোনয়নে প্রচুর বাণিজ্য হয়েছে।


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনব্যাপী ব্যালট বাক্স দখলের চেষ্টা, অবশেষে টাকা বিতরণ- সবকিছুতেই ব্যর্থ হয় বিএনপি-জামায়াতের নেতারা।

সাধারণ মানুষের জানা দরকার, রাতের ভোট মানে হলো বিএনপি-জামায়াতের সময়ে হওয়া হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল, অগ্নিসন্ত্রাসের ইতিহাস মানুষের মন থেকে মুছে দেয়ার অপচেষ্টা।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ