প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম
সরকারবিরোধী যুগপত্ আন্দোলনের পরবর্তী ধাপেও শক্ত কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। আরো কিছুদিন গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা ও দেশি-বিদেশি সমর্থন আদায় করতে চায় দলটি।
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে কয়েক ধাপে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী এনে ঢাকায় বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ পর্যায়ে ঢাকামুখী রোড মার্চ, লং মার্চ কিংবা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো বড় কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী শনিবার ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি করা হবে। শনিবার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। গত রাতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে কর্মসূচি ঠিক করতে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও বুধবার সাংগঠনিক সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। এতে কর্মসূচির একটি খসড়া পথরেখা তৈরি করা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন কবে শুরু হবে তা ঠিক করেননি দলের নীতিনির্ধারকরা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুগপত্ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশের আদলে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এসব সমাবেশে বড় জমায়েত করার সিদ্ধান্ত হয়। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিতে চায় দলটি।
যুগপত্ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা থেকে অন্য বিভাগ অভিমুখে রোড মার্চের প্রস্তাব দিলেও এ নিয়ে আগ্রহী নয় বিএনপি। দলের নেতারা বলেন, রোড মার্চ বিশাল রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ। তা ছাড়া এই কর্মসূচিতে সাড়া পেতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নেতৃত্ব দিতে হবে। দলের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা রোড মার্চের নেতৃত্ব দিলে মহাসড়কজুড়ে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ পাওয়া কঠিন হবে।
বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, সারা দেশে আবার ধরপাকড় শুরু হয়েছে। নতুন গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি তল্লাশি ও জামিন বাতিল করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনাও বাড়ছে। তাই নতুন কর্মসূচি দিয়ে দ্রুত মাঠে নামতে হবে, নইলে আন্দোলন শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের জেলে যেতে হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সিটি নিউজ ঢাকা বলেন, কর্মসূচি প্রায় চূড়ান্ত, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, এবারও ব্যতিক্রম কিংবা শক্ত কর্মসূচি আসছে না। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে থাকবেন তাঁরা।
যৌথ ঘোষণা পিছিয়ে যেতে পারে
রূপরেখা প্রণয়ন নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের চিন্তার সঙ্গে একমত হননি বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে আরো আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করেন নেতারা। ফলে যৌথ ঘোষণা কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা যায়, সরকার গঠনের পর রাষ্ট্র মেরামতে কী করা হবে তা নিয়ে ৩৫ দফার খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছে এই জোট। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফার সমন্বয়ে এই ৩৫ দফা খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সভায় বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিএনপি ২৭ দফা অটুট রেখে গণতন্ত্র মঞ্চের দাবিগুলো সমন্বয় করতে চায়।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, ১০ দফা দাবি ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার করা হয়েছে। পুস্তিকা আকারে ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। এখন এর মূল কাঠামো পরিবর্তন করলে সবার মধ্যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেবে।
নুরের দল নিয়ে সমস্যা দেখছে না বিএনপি
বিএনপি নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জোট গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদের বের হওয়ার বিষয়টি ওই জোটের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মনে করছেন নেতারা। স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, আন্দোলনে এর প্রভাব পড়বে না। সভায় দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, গণঅধিকার পরিষদ যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে বলে তাঁকে জানিয়েছে।
জেকেএস/