প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৩, ০৪:১৪ এএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি। কিন্তু সাংবিধানিকভাবেই তার হাতে খুব বেশি ক্ষমতা নেই। আমাদের অতীত তো সুখকর নয়। নির্বাচন কমিশন গঠনে আমাদের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম রাষ্ট্রপতির কাছে। তাকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনোটাই তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার হাতে সেই ক্ষমতা নেই। সুতরাং তিনি সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলে সবাই মনে করছেন। কিন্তু আমরা মনে করছি, সরকারের লিখে দেওয়া যে বক্তব্য, তা তিনি পাঠ করেছেন।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘তার পরও বলব ওখানে রাষ্ট্রপতির একটা কথা আছে যেটা আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লেগেছে। তিনি (রাষ্ট্রপতি) বলেছেন, গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন সর্বজনীন হয় না। এ কথাটা ভালো। আরেকটা কথা তিনি বলেছেন, সংঘাত দিয়ে, প্রতিহিংসা দিয়ে কখনো গণতন্ত্র প্র্যাকটিস করা যায় না। এই কথাগুলো ভালো। কিন্তু যারা প্র্যাকটিস করছেন তারা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারছেন, গণতন্ত্রের প্র্যাকটিস তো সেখানে নেই। বরং কী করে গণতন্ত্রকে ধবংস করা যায় সেটা তারা প্র্যাকটিস করছেন।’
সংঘাত এড়াতে হলে সরকারকে আগে পদত্যাগ করে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার যদি চায় সংঘাত এড়িয়ে সামনের দিকে যাবেন, তাহলে প্রথম কাজটা করতে হবে বিরোধী দলগুলো যেটা চাচ্ছে সেই দাবি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ পদত্যাগ করে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবগুলো পন্থা ব্যবহার করেছি। ২০১৮তে তাদের কথা বিশ্বাস করে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। পরিণতি কী হয়েছে সবাই দেখেছেন। এখন তো আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি, আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করেন। এগি (একমত) করুক যে, আমি পদত্যাগ করব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয় নিয়ে কথা বলব-তাহলেই হয়ে যায়।’
পদত্যাগ না করলে বিএনপি সংলাপে যাবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের বিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আগে পদত্যাগ করতে হবে। ঘোষণা দিতে হবে যে, আমি পদত্যাগ করব। তারপর সংলাপ।’
বর্তমান জাতীয় সংসদকে ‘সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর সংসদ’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার পার্লামেন্টে অনেক বক্তৃতা করলেন। এমন বক্তৃতা করলেন যে দিস ইজ দ্য বেস্ট পার্লামেন্ট। ওখানে হিসাব করলে খুঁজে পাবেন না-কয়টা মুলতবি প্রস্তাব ওখানে আছে। কয়টা জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় নিয়ে দিনের কর্মসূচি মুলতবি করে আলোচনা হয়েছে। যে কথাগুলো জনগণের দাবি হিসাবে উঠে আসে, মাঝেমধ্যে সে বিষয়গুলো নিয়েও ওখানে আলোচনা হয় না।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, এই সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর ছিল। এই সংসদ তো গ্রহণযোগ্যই নয় জনগণের কাছে। এটা নির্বাচিত নয়, অনির্বাচিত সংসদ।’
এর আগে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে ছিলেন ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাইফুদ্দিন মনি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফর রহমান, এসএম শাহাদাত, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।
বিএস/