• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবারও সক্রিয়!

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৩, ০৪:০২ এএম

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবারও সক্রিয়!

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র। সম্প্রতি দেশীয় একটি গণমাধ্যমে সরকারকে বিতর্কিত করতে একটি সংবাদ প্রকাশের ঘটনা সেই চক্রান্তেরই প্রতিফলন বলে মনে  করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশের বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। রাজনীতি সচেতন মহল মনে করছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করতে  ২০০৭ সালের ১/১১ এর কুশীলবরাই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

শনিবার (৮ এপ্রিল) ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার বিষয়টিকে তুলে ধরে এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবার সক্রিয় বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে একটি তথাকথিত ‘ভুল’ সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বাড়িতে গভীর রাতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে বিতর্কিত ডিজিটাল আইনে মামলায় জেলে পাঠায়। সম্পাদকের নামেও একই আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধীরা তো বটেই, সরকার সমর্থক বিশিষ্টজনদের একটি অংশও এই পদক্ষেপকে অনাবশ্যক বলে মনে করছেন।

কিন্তু শাসক আওয়ামী লীগ সরকার এই ঘটনাটিকে কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছে- তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দলের কয়েক জন নেতাকে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে রমজান মাসেও বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে আন্দোলনে কেন নামাতে হয়েছে?

চলতি বছর ডিসেম্বর বা তার পরের মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে খুবই ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে দেশটির রাজনীতি। বাংলাদেশে সচরাচর রমজান মাসে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ থাকে। তার মধ্যেও তাঁদের মাঠে নামতে হচ্ছে কেন - এই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার দাবি, গোয়েন্দা সূত্রে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে খবর গিয়েছে, হঠাৎই একটি বিদেশিশক্তি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শাসক দলের নেতৃত্বের মতে- প্রভাবশালী এই সংবাদপত্রগোষ্ঠী অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিদেশি শক্তির এমন তৎপরতায় ‘অংশ নিয়েছে’। তাই তাদের এই ‘ভুল’-কে বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ বলে ধরে নিচ্ছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা বিপ্লব বড়ুয়া এবং তারানা হালিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যেমন ওই সংবাদপত্রের বিরুদ্ধ দলের বিভিন্ন সংগঠনকে রাস্তায় নামিয়েছে, তেমনি শক্ত অবস্থান নিয়েছে প্রশাসনও। 


বিদেশি শক্তির কোন তৎপরতা নজর কেড়েছে ঢাকার শাসকদের? ঢাকার প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকার-বিরোধী হিসাবে পরিচিত নানা জনের সঙ্গে আমেরিকার দূতাবাস যোগাযোগ করছে। ঢাকার পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয়েছে কলকাতাকে। সম্প্রতি হাসিনা সরকারের বিরাগভাজন এক নামী অর্থনীতিবিদ কলকাতায় আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে বৈঠক করেছেন। আসামের কোকড়াঝাড়ে একটি সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতিও বাঁকা চোখে দেখছে ঢাকা। জামায়াতে ইসলামির কিছু নেতাকর্মীকেও কলকাতায় দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক গুপ্তচর বিভাগের এক বড় কর্তা সম্প্রতি কলকাতা সফর করে গিয়েছেন।

২০০৭-এর ১১ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাপ্রধান মিলে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পরে আমেরিকার দূতাবাস বাংলাদেশের এই নামী অর্থনীতিবিদের নেতৃত্বে সরকার গঠনে তৎপর হয়েছিল বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। 

এর পরে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। কিন্তু সরকারের সঙ্গে ওই অর্থনীতিবিদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। তাঁর প্রতি ‘উপযুক্ত’ আচরণ করার আর্জি জানিয়ে বিশ্বের বেশ কিছু বিশিষ্ট জনের স্বাক্ষর করা একটি আবেদন সম্প্রতি বিজ্ঞাপন হিসেবে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রে মুদ্রিত হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই বিজ্ঞাপনের উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, ঢাকার এই সংবাদপত্র গোষ্ঠী সেই সময়ে অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে ছিল। এই বারেও তাদের বিশ্বাস করার প্রশ্ন নেই।

ত্যাগ-তিতিক্ষার রমজান মাসের ঢাকায় অবিশ্বাস-শত্রুতার চোরাস্রোত কিন্তু বহমান।

আর্কাইভ