• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
২৫১ সদস্যের নতুন কমিটি

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ‘খোকন রাজাকারের’ ছেলে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ‘খোকন রাজাকারের’ ছেলে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে

জাহিদ হোসেন ওরফে ‘খোকন রাজাকার’ এবং তার ছেলে খায়রুজ্জামান লিংকন (ডানে)

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দার ‘খোকন রাজাকারের’ ছেলে খায়রুজ্জামান লিংকনকে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে তাকে। যুগ্ম সম্পাদক পদমর্যাদায় এই মনোনয়নে যুবদলসহ বিএনপির নানাস্তরে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কৌশল হিসেবে বিএনপির শীর্ষনেতৃত্ব যখন একাত্তরে বিতর্কিতদের থেকে দলকে মুক্ত করতে চাইছে, সে সময়েই চিহ্নিত একজন রাজাকারের সন্তানকে কীভাবে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হলো, এই প্রশ্ন উঠেছে। যুবদল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যুবদলের কমিটি অনুমোদন করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
যুবদল সূত্রে আরও জানা যায়, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকারের বড় ছেলে খায়রুজ্জামান লিংকন দীর্ঘদিন ধরে সুইডেন প্রবাসী। জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকারও সেখানে পলাতক অবস্থায় আছে। খায়রুজ্জামান লিংকন সুইডেনে যুবদল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে ২০১৯ সাল থেকেই যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা শুরু হয়। বিএনপি নেতা  ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছেন বলে যুবদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।


জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘আমার বাড়ি নগরকান্দা উপজেলায়। আমি তো চিনি তাকে (খায়রুজ্জামান লিংকন)। সে ছোটবেলা থেকে ছাত্রদল করেছে। এখন দেশের বাইরে আছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। এমন দণ্ডপ্রাপ্তদের (খোকন রাজাকার) চেয়েও বড় অনেকে অনেক দলে আছে।’
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল আরও উল্লেখ করেন, ‘বাপ যদি ডাকাত হয়, ছেলে তো সাধুও হতে পারে। বাপের অপরাধে ছেলে কেন অপরাধী হবে। আমাদের রাজনীতিতে ছেলে এক ধারা, বাপ এক ধারার এরকমও নজির আছে।’
যুবদল সূত্র জানায়, ফরিদপুরের নগরকান্দার রাজাকার কমান্ডার ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাহিদ হোসেন খোকনও সুইডেনের স্টকহোমে বসবাস করছেন।
২০১৪ সালের নভেম্বরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালে নগরকান্দার পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু হলে পালিয়ে যায় খোকন রাজাকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, ‘তার (খায়রুজ্জামান লিংকন)  বাবা কী করেছে জানি না। সে দল করা লোক, আমাদের যুবদলের পুরনো নেতা।’
বিএনপির একাধিক প্রভাবশালী নেতা বলেন, একাত্তর প্রশ্নে বিএনপি যখন নতুন করে দলীয় অবস্থান নির্ধারণ করে জামায়াতকে দূরে সরিয়েছে, তখন চিহ্নিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবারের সন্তানকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, দলের শীর্ষনেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ও পলিসি বাস্তবায়ন পুরোপুরি প্রতিপালন হচ্ছে না। দলের ভেতরেই একটি অংশ যেকোনও উপায়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে দলে অবস্থান গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছে। এতে করে বিএনপিই ক্ষতির শিকার হবে।

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ