প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৪:০৪ পিএম
সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি আজ শনিবার দেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করবে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের ব্যানারে মাঠে থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের এই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। আর ইউনিয়নে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ সফল করতেও ৪০টি জেলায় ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও এই শান্তি সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বিএনপির পদযাত্রায় স্থানীয় বিএনপি, অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশ গ্রহণ করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জেলা নেতাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এত দিন বিভাগীয় ও জেলা সদরে বিএনপির ১০ দফার সমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ কর্মসূচির স্থানের মধ্যে অনেক দূরত্ব ছিল। তাই সেখানে সংঘাতের আশঙ্কা ছিল কম। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই দলের কর্মসূচির মধ্যে দূরত্ব বেশি হবে না। ফলে দুই পক্ষের উত্তেজনা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ইতিমধ্যে দুই দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। আজ সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, ততক্ষণ আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ করবে। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায়, বিশেষ করে পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, তাদের আগুন সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তির জন্য সমাবেশ করছি। তারা নয়াপল্টনে করে, আর আমরা করি উত্তরায়। গত ১০ ডিসেম্বর তারা রাজধানীতে সমাবেশ করেছে, আর আমরা সাভারে করেছি। তিনি বলেন, আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখি। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক চেয়েছি। তাদের জন্ম থেকেই সবকিছুতেই তারা আমাদেরকে বরাবরই মনে করে আসছে শত্রুপক্ষ। শত্রুপক্ষ হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে শত্রুতাই করে গেছে। এই শত্রুতার অপরিহার্য সঙ্গ ষড়যন্ত্র। তাদের মাঠ ছেড়ে দিলে আবার আগুন-সন্ত্রাস শুরু করবে। তারা (বিএনপি) মনে করতে পারে রাজপথের শক্তিতে আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে। এজন্যই পালটা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে আওয়ামী লীগ। আমরা মাঠ ছাড়ব না।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পালটা কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীনরা পালটা কর্মসূচির মাধ্যমে সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রতিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ একটি কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পালটা কর্মসূচি দিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র, সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, তারা ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমণ করা, হামলা করতে অত্যন্ত পারদর্শী। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি—তারা যেন ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভাগীয় শহরগুলোয় ইতিমধ্যে নীরব পদযাত্রা করেছি। আজ শনিবার তৃণমূল তথা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা করব। আমাদের এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য একটাই—গ্রাম-ইউনিয়নে যুগপৎ আন্দোলনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা দাবিকে ছড়িয়ে দেওয়া। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন নতুন মাত্রা যোগ হবে। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ পালটা কর্মসূচি দেয়। কারণ আমাদের কর্মসূচি দেখে আওয়ামী লীগ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের বিদায়ের অগ্রযাত্রা হচ্ছে—বিএনপির এ পদযাত্রা। বিগত দিনে বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। পদযাত্রায়ও হবে না। মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, সার, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি। এই প্রতিটি দাবিই জনগণের প্রাণের দাবি।
এ প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্থাৎ গ্রামগঞ্জে পদযাত্রা করে তাদের যে নৈরাজ্য সন্ত্রাস সেটি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ এটা হতে দেবে না। আমাদের দল সতর্ক পাহারায় থাকবে। তারা যদি গ্রামগঞ্জে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা চালায়, জনগণ তাদের প্রতিহত করবে।
এনএমএম/