• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

জেল থেকে বেরিয়ে যা বললেন ফখরুল-আব্বাস

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩, ০৩:২৩ এএম

জেল থেকে বেরিয়ে যা বললেন ফখরুল-আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

এক মাস পর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন তারা। এ সময় নেতাকর্মীরা তাদের স্বাগত জানান। এর আগে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে দেওয়া উচ্চ আদালতের জামিনের কাগজপত্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়।

জামিনে মুক্তি পেয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পিছু হটার পথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জেলের ভয়েও আন্দোলন থামবে না। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।

ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত এবং পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

পরদিন ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ৭ ডিসেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের জামিনের জন্য নিম্ন আদালতে চার দফা আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হলেন তারা।  

সাদা পাজেরো জিপে করে বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। পাজেরো গাড়ির ওপর থেকে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানোর জন্য এ দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অবিলম্বে এসব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করছি।

এর পরই ক্রিম কালারের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস। তিনি গাড়ির ওপর থেকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা, মানুষের ভাগ্যের কথা ও তাদের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলেছি, বাজার দরের কথা বলেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় করিনি, কোনো পাপ করিনি। এই সরকার আমাদের একে একে বেশ কয়েকবার জেলে নিয়েছে। নেতা-কর্মীদের কাছে থাকা থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছে।

আমাদের মুক্তিটা নিঃসন্দেহে আনন্দের এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে রয়ে গেছে। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা বর্ণনা করতে পারব না।

সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি সরকার মানবিকতার কথা বলেছে। তাই তাদের বলব, এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হন। এরা বন্দি নয়, এরা চোর নয়, এরা ডাকাত নয়। এরা সব রাজনৈতিক কর্মী। কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই নেতার জামিনের সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকে কারাগার প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। তাদের মুক্তিকে কেন্দ্র করে কারাগার কর্তৃপক্ষ কারাগার এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

বন্দিদের আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের কারাগার এলাকায় প্রবেশকালে তল্লাশি করা হয়। বিকালে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস কারাগার চত্বরে প্রবেশ করতে চাইলে কারাফটকে তার গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। এ নিয়ে দলটির কয়েক নেতাকর্মীর সঙ্গে কারারক্ষীদের বাদানুবাদ হয়। পরে তাকে কারা চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

দুই নেতাকে স্বাগত জানাতে কারা ফটকের বাইরে উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, ইউনুস মৃধা, শায়রুল কবির খান। 

রাজনীতি সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ