• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

হাসপাতালে এক মাস কেমন ছিলেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২১, ১০:২৪ পিএম

হাসপাতালে এক মাস কেমন ছিলেন খালেদা জিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক মাস অতিবাহিত করেছেন। গত এক মাসে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের কতটা উন্নতি হয়েছে, তা জানার চেষ্টা করেছে সিটি নিউজ ঢাকা।

১১ এপিল গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত বিএনপির প্রধানকে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মে হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই ওই হাসপাতালের সিসিইউতেই চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনি। এরপর থেকেই ওই হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল টিমের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মাস অতিবাহিত করলেন খালেদা জিয়া।

জানা গেছে, গত এক মাসের চিকিৎসায় করোনামুক্ত হওয়াসহ খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উন্নতির এই প্রক্রিয়া নিয়ে তার চিকিৎসকেরা সন্তুষ্ট নন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী পুরনো রোগ আর্থ্রাইটিস ডায়াবেটিসে ভুগছেন। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে পোস্ট-কোভিড জটিলতা। তার কিডনি হার্ট করোনার কারণে অ্যাফেক্টেড। করোনার কারণে তার ফুসফুসের সংক্রমণও জটিল আকার ধারণ করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনের ফুসফুস থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে সিসিইউর বাইরে রেখে চিকিৎসা দেয়া এখনও নিরাপদ মনে করছেন না চিকিৎসকেরা। তাই আরও কিছুদিন তাকে সিসিইউতে থাকতে হবে। এরপর শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।

একজন চিকিৎসক সিটি নিউজকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে সিসিইউর বাইরে রেখে চিকিৎসা দেয়া নিরাপদ মনে করছি না আমরা। কারণ তার হার্ট, কিডনি ফুসফুসের যে অবস্থা, তাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি। 

চিকিৎসকেরা বলছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে। কারণ তিনি যেসব রোগে আক্রান্ত সেগুলোর উন্নত চিকিৎসা দেশে পর্যাপ্ত নয়। তার এসব রোগের চিকিৎসা আগে আমেরিকা, লন্ডন সৌদি আরবে হয়েছে। আগে যেসব চিকিৎসক তার চিকিৎসা দিয়েছেন, তারাই রোগের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন এবং ভালো চিকিৎসা দিতে পারবেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দল পরিবারের পক্ষ থেকে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বারবার সরকারের অসহযোগিতার কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক বছরে একাধিকবার দল পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য লিখিত চিঠি দেন তার ভাই শামীম এস্কান্দার। পর্যালোচনা করে দণ্ডপ্রাপ্ত কারও বিদেশ যাওয়ার নজির নেই উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে দেয়। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, তারপরও দল পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার আশা ছাড়েননি। তারা  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া যায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। খুব বেশি উন্নতি হয়নি। একপ্রশ্নের জবাতে তিনি জানান, প্রতিদিন চিকিৎসকেরা উনার (বেগম খালেদা জিয়া) শারীরিক রিপোর্ট দিচ্ছেন। সেখানে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়টি উঠে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বারবার বলছি। কিন্তু সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছেন।

আইএম/এম. জামান

আর্কাইভ