বিশেষ প্রতিনিধি
বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি নতুন না। বহু বছর ধরেই তারা এ কাজটি করছে। খুব শিগগিরই দু-একজনকে এই ঘটনায় আইনের আওতায়ও আনা হতে পারে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অনেক দিন ধরে চলা এই লবিংয়ের বিষয় সরকার জানলেও, কিছু না বলে তারা সেখানে কাউন্টার দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে এই মুহূর্তে দেশের জন্য বিষয়টি খুবই ক্ষতিকর মনে হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। বিএনপি এই লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে সুদূরপ্রসারী এক 'ষড়যন্ত্রে' লিপ্ত হয়েছিল।
দেশবিরোধী একটা দল কয়েক বছর ধরেই দেশের ক্ষতি করার জন্য 'নীলনকশা' এঁকে যাচ্ছিল। তাদের নিয়ে বারবার কথা হলেও, তথ্যপ্রমাণ সেভাবে হাতে আসছিল না। তবে এবার সরাসরি তথ্য হাতে আসার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ক্ষতি করার জন্য যে নীলনকশা করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে লবিস্ট নিয়োগ করে প্রচুর টাকাও ঢালা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারবিরোধী প্রচারের জন্য লবিস্ট ফার্মকে বিএনপি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা সাড়ে ৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রমাণ হিসেবে লবিস্ট ফার্মবিষয়ক কিছু তথ্য-উপাত্তও তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
সরকার কোনো লবিস্ট ফার্ম বা তদবিরকারী নিয়োগ করেছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেনি। তবে জনসংযোগের (পাবলিক রিলেশন্স, সংক্ষেপে পিআর) জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। আর এর জন্য প্রতি মাসে সরকারকে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নিয়োগ করা পিআর প্রতিষ্ঠানটি লবিস্ট ফার্ম কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘লবিংয়ের উদ্দেশ্যে সরকার কোনো ফার্ম নিয়োগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী ভূমিকা থাকতে পারে। বাংলাদেশ সরকার শুধু জনসংযোগের কাজটিই ওই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করাচ্ছে।’
এ বিষয়ে একই বক্তব্য দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি দাবি করেছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিশেষ করে বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা অবৈধ অর্থ ব্যয় করে দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সিটি নিউজ ঢাকার কাছে। তিনি বলেন, ‘এতদিন পর কেন সরকারের পক্ষ থেকে কথাটা আসছে? যখন তারা তাদের কাজের জন্য বিদেশে কলঙ্কিত হয়েছে তখন তারা এসব কথা বলছে। আর সরকার নিজেই স্বীকার করেছে, এ মুহূর্তে তারা ৭টি লবিস্ট নিয়োগ করেছে।’
পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘তর্কের খাতিরে বলতে হয়, তারা যদি লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে তাহলে বিএনপিও লবিস্ট নিয়োগ করতেই পারে। তবে বিএনপি এখনও কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক এহসানুল হক মনে করেন, লবিস্টদের আমেরিকায় ক্ষমতা অনেক বেশি। সিটি নিউজ ঢাকাকে তিনি বলেন, ‘লবিস্ট বিষয়টা আমেরিকায় অনেকটাই আইনগতভাবে স্বীকৃত। আর তারা সেখানে বেশ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যদিও এর জন্য অনেক টাকাও নেন তারা। কাজেই এটা ঘটতে পারে।’
বিএনপির লবিস্টদের তথ্যপ্রমাণের কপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
দেশের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে আসছে আওয়ামী লীগ। এর প্রমাণও পাওয়া গেছে বারবার। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে আল-জাজিরার প্রতিবেদন, সবগুলোতেই স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
এর সবশেষ প্রভাব ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দফতর।
এম. জামান
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন