• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

বাদুড় যখন ভাইরাসের বাহক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

বাদুড় যখন ভাইরাসের বাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

নিপাহ থেকে করোনা : বাদুড়ই কি মূল অপরাধী?

বাদুড়কে বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর ইমার্জিং ভাইরাসের প্রাকৃতিক রিজার্ভার হোস্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা মানুষের মধ্যে গুরুতর রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম, যার মধ্যে রয়েছে মারবার্গ ভাইরাস, হেন্দ্রা ভাইরাস, সোসুগা ভাইরাস এবং নিপাহ ভাইরাসের মতো আরএনএ ভাইরাস।

৫০ বছরে, ইবোলা ভাইরাস, মারবার্গ ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস, হেন্দ্রা ভাইরাস, গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সিনড্রোম করোনাভাইরাস (SARS-CoV), মধ্যপ্রাচ্যের রেসপিরেটরি করোনাভাইরাস (MERS-CoV) এবং SARS-CoV-2-সহ বেশ কয়েকটি ভাইরাস পৃথিবীর মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। আর এই ভাইরাসগুলোর সাথে বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড়ের সংযুক্তি আছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোয়াইন অ্যাকিউট ডায়রিয়া সিন্ড্রোম ভাইরাসসহ ক্রমবর্ধমান সংক্রমিত করোনাভাইরাস এক ধরনের বাদুড় থেকে এসেছিল এবং বিশ হাজারেরও বেশি শুকরের প্রাণনাশের কারণ করেছিল। চলমান করোনা মহামারি, বাদুড়জনিত ভাইরাল উত্থানের হুমকিকে পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

বাদুড় অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় বেশি ভাইরাস বৈচিত্র্য ধারণ, বহন এবং সংক্রমণ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ভাইরাল বৈচিত্র্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রোডেন্টিয়া (ইঁদুর) এবং চিরোপটেরা (বাদুড়) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাদুড় হলো ইঁদুরের পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বাধিক বৈচিত্র্যময় স্তন্যপায়ী প্রাণী, যা সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রায় ২২ শতাংশ। পৃথিবীতে ১২০০ এর অধিক প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। এই প্রাণীটি অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত প্রতিটি মহাদেশে বসবাস করে।

বাদুড় যেহেতু সামাজিকভাবে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তাই যেকোনো ভাইরাস তাদের দেহে প্রবেশ করলে সহজেই তা দলের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
বাদুড় কেন এত রোগ ছড়াতে সক্ষম?

বাদুড়ই একমাত্র অবাধে উড়তে পাড়া স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তারা উড়ন্ত অবস্থায় থাকে। উড়তে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন, তাই বাদুড়কে উচ্চমানের খাবার খেতে হয়।

তারা সাধারণত ফল, পরাগ, পোকামাকড়, মাকড়সা, ছোট প্রাণী, চিনি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পছন্দ করে এমনকি রক্তও খেতে পারে।

একটি বাদুড়ের বেশিরভাগ শক্তি তার ডানাগুলো শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন। তাই এর শরীরের অন্যান্য সিস্টেমগুলো খুব সুগঠিতভাবে বিকশিত হয়েছে।

শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাদুড়ের মধ্যে বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা বারবার দেখিয়েছেন যে, একটি বাদুড় মারাত্মক ভাইরাস বহন করলেও নিজে অসুস্থ না হয়ে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

মানুষের তুলনায় একটি বাদুড়ের শরীর, যেকোনো রোগ সহ্য করার ক্ষেত্রে খুবই সফল। এর মানে হলো যে, একটি সুস্থ-সুদর্শন বাদুড় বিভিন্ন রোগের বাহক হতে পারে।

বাদুড় যেহেতু সামাজিকভাবে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তাই যেকোনো ভাইরাস তাদের দেহে প্রবেশ করলে সহজেই তা দলের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।

আবার বাদুড় একই আকারের অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় গড়ে বেশিদিন বাঁচে এবং সহজেই একই স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে চলে যায়। তাই তার দেহ থেকে যেকোনো ধরনের রোগ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে তারা অত্যন্ত সফল।

২০০১ সালে প্রথম শনাক্তের পর থেকে বাংলাদেশে শীতকালে প্রায় প্রতি বছরই নিপাহ ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। আর এটি ছড়ায়  কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড়ে খাওয়া ফল বা সবজির মাধ্যমে।


নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ

২০০১ সালে প্রথম শনাক্তের পর থেকে বাংলাদেশে শীতকালে প্রায় প্রতি বছরই নিপাহ ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়। আর এটি ছড়ায়  কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড়ে খাওয়া ফল বা সবজির মাধ্যমে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। বাংলাদেশ মূলত কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ছড়ায়, আর খেজুরের রসে ভাইরাস মিশে বাদুড়ের লালা থেকে।

খেজুরের রসের হাঁড়িতে বাদুড় রস খেতে যায় এবং সেই রসে বাদুড়ের লালা মিশ্রিত হয়ে ভাইরাস মিশ্রিত হয়। শীতকালে যেহেতু প্রায় প্রতিবছরেই নিপাহ সংক্রমের ঘটনা ঘটছে তাই কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। খেজুরের রস পড়ার নল এবং হাঁড়ি জাল বা অন্য কিছু দিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে দিলে বাদুড় থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে সাধারণ জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথাসহ বমির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রোগটি আরও গভীর হলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে। শীতকালে এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিপাহ ভাইরাসের যেহেতু সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই এবং এর ভ্যাকসিনও এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি তাই এই বিষয়ে সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই সর্বোত্তম পন্থা।

আর্কাইভ