প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২, ১১:০০ পিএম
৯ বছর পর নতুন একটি এয়ারলাইন্স পেখম তুলে বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনকে স্বস্তির আবহাওয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে। ১৭ জুলাই ২০১৪ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পর বাংলার আকাশে বিচরণ করতে যাচ্ছে দেশের নবীনতম বিমানসংস্থা এয়ারএ্যাস্ট্রা। বাংলাদেশ এভিয়েশনে আসছে ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে এয়ারএ্যাস্ট্রা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে দেশের আকাশপথকে রঙ্গীন করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন শিল্পের ইতিহাস অম্ল মধুর। নানা রকম উচ্ছ্বাস আর আবহ নিয়ে আকাশপথে বিচরণ করার জন্য বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ ৮/৯টি এয়ারলাইন্সের শুভাগমন ঘটেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ সেসব এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে।
প্রায় ২৬ বছর যাবত বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো নানাভাবে বাংলাদেশ আকাশ পরিবহনকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। বারবার বন্ধুর পথে হোঁচট খেতে হয়েছে। বন্ধ হওয়ার মিছিলকে সমৃদ্ধ করেছে, যা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে এই বন্ধ হওয়ার মিছিলের পরিবর্তে এগিয়ে যাওয়ার মিছিলে রূপান্তরিত হবে এই প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ এভিয়েশন।
একটি এয়ারলাইন্সের আবির্ভাবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বাংলাদেশের মতো অধিক জনবহুল দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। একটি দেশের আকাশ পথের গতিশীলতা থাকলেই অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশীলতা বজায় থাকে। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশলীতা আরও বেশি বেগবান হবে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মূলত দেশীয় পর্যটকদের উপরই নির্ভরশীল। দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বেশি বিকশিত করার জন্য এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে যেন এই শিল্পে সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রারম্ভে সারা বিশ্বের জনপ্রিয় নিউ জেনারেশন এয়ারক্রাফট এটিআর ৭২-৬০০ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে এয়ারএ্যাস্ট্রা।
কোভিড ১৯ এর কবলে পড়ে সারা বিশ্বের এভিয়েশন শিল্প চরম দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েছিল। অনেক সুখ্যাত সম্পন্ন এয়ারলাইন্স করোনা মহামারির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে প্রি-কোভিড অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। সেখানে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমণ বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের অগ্রগতির পরিচায়ক বহন করছে, সাথে দেশের অর্থনীতি পজিটিভ সূচককে নির্দেশিত করছে।
বাংলাদেশ এভিয়েশনে করোনা মহামারিতে বিপরীত চিত্রও দেখতে পাই, প্রায় দশ বছরের অধিক সময় ধরে সেবা দেয়া এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কোভিড ১৯ এর শুরুতে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে। যা আজ অবধি আর ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেনি।
বর্তমানের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দিয়ে ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখা প্রত্যেকটি ব্যবসায় সেই নীতি বহন করা উচিত। শুধুমাত্র বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভবিষ্যৎ ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে দেখা গেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। অনির্ধারিত মহামারি এভিয়েশন শিল্প কিংবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পর্যটন শিল্প কিংবা হোটেল ইন্ডাস্ট্রি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে হাজার হাজার কর্মক্ষম লোক বেকার হয়ে গেছে। করোনা পরবর্তীতে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে প্রায় তিন শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে যা বেকার সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিকভাবে দুটি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এয়ারএ্যাস্ট্রা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নতুন এয়ারক্রাফট, নতুন নতুন রুট, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প পজিটিভিটি নিয়ে এগিয়ে যাবে।
এয়ারএ্যাস্টার আগমনের কারণে দেশের জিডিপিতে অংশীদারিত্ব বাড়বে বাংলাদেশ এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পের। এ নতুন এয়ারলাইন্স প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফসহ অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটি পরিচালনা পর্ষদ, এয়ারএ্যাস্ট্রাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা থাকছে একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে।
এয়ারএ্যাস্ট্রা বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ারসহ জাতীয় বিমানসংস্থার সঙ্গে উন্নত সেবা আর সাশ্রয়ী ভাড়ায় দেশীয় যাত্রীদের আস্থা অর্জন করবে এই প্রত্যাশা সকলের। প্রত্যাশার পারদ ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বগতির কারণে আশা করছি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে শেয়ার বৃদ্ধি করে দেশীয় এভিয়েশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এয়ারএ্যাস্ট্রা।
এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে জানাই স্বাগতম, সুস্বাগতম।
লেখক
মো কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক, জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স