• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

র‌্যাবের বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও এক ডজন মামলা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১, ০৬:২৭ পিএম

র‌্যাবের বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও এক ডজন মামলা

মোশাহিদ রনি

র‌্যাবের বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও এক ডজন মামলা। এসব মামলা তদন্তে র‌্যাবের চারটি চৌকস টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি টিমে ১০ জন করে সদস্য রয়েছেন। যারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলা তদন্তে একেবারে অভিজ্ঞ। আগেও এ টিমের সদস্যরা ক্লুলেস অনেক মামলা তদন্তে সফল হয়েছেন। তাদের হাতেই আছে ঢাকার ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির আলোচিত সব মামলা। নতুন করে হেলেনা, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌদের মামলা র‌্যাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে। 

র‌্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, মামলার তদন্তভার চেয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যেই আবেদন করেছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। 

গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো সংস্কৃতির গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষায় ধারাবাহিক অভিযান শুরু করে র‌্যাব। আইনের আওতায় নিয়ে আসে এই চক্রের মূল হোতাদের। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া ১০টি মামলা র‌্যাবই তদন্ত করছে। সব মিলিয়ে র‍্যাবের তদন্তের আওতায় ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও মাদক দুইটি, রিজেন্ট সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অস্ত্র ও জালনোটের তিনটি, শামীমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও বিদেশি রুপির তিনটি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জালনোটের দুইটি মামলা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছে আছে। এ মামলাগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করছে র‌্যাবের চৌকস টিমের এই সদস্যরা।  

র‌্যাবের তদন্ত সূত্র জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান তারেক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। তার কর্মকাণ্ডে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় তাকে আইনের আওতায় আনে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ সম্পদ অর্জন-সংক্রান্ত মামলা হয়। কোভিড-১৯ অতিমারিতে যারা জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে দুর্নীতি করেছে তাদের তালিকায়ও তারেকের নাম ছিল। 

তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে যাত্রার পর থেকে র‌্যাব এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মামলার তদন্ত করেছে। সফল তদন্ত শেষে র‍্যাব এখন পর্যন্ত ১৬ শতাধিক মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ১৫৭টি মামলা। 

এ প্রসঙ্গে  র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল কে এম আজাদ সিটি নিউজকে বলেন, যেকোনো মামলা তদন্তে সব সময় নেপথ্যে থাকে র‌্যাব। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা অনুসন্ধানের পাশাপাশি সকল ধরনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মামলার আদ্যোপান্ত তুলে আনে র‌্যাবের চৌকস তদন্ত দল। 

তিনি বলেন, যেখানে র‌্যাবের টিমের সদস্যরা তদন্ত শুরু করেন সেখানেই তদন্তে নতুন মোড় নেয়, বেরিয়ে আসে সঠিক তথ্য। যাতে করে বিচার প্রার্থীরা পান সুষ্ঠু বিচার, র‍্যাব মূলত সেটি নিশ্চিত করতেই দক্ষতার সঙ্গে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে। 

কয়েকটি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, র‌্যাবের তদন্ত টিমের সদস্যরা স্পর্শকাতর মামলায় গোড়ায় ঢুকে যায়। এ ক্ষেত্রে মেজর সিনহাসহ কয়েকটি মামলার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। 

২০২০ সালের ৩ জুলাই। ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাভেলস শো ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ইউটিউবের কাজের জন্য সিনহা টেকনাফ গেলেও, সেখানে গিয়ে ওসি প্রদীপের অপরাধ সাম্রাজ্য জেনে ফেলেন তিনি। এই খবর পৌঁছায় টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমারের কাছে। ওসি প্রদীপের ইয়াবা বাণিজ্য নিয়ে মেজর সিনহা ইন্টারভিউ নিতে চাইলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ মামলায় র‌্যাব ভেতরে-বাইরের সব তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। 

র‍্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ক্যাসিনোকাণ্ডের সম্রাট ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের আমলনামা। ঢাকার দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দলের ছত্রছায়ায় ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব পরিচালনা করতেন তিনি। তার নিয়ন্ত্রণে ওইসব ক্লাবে ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসত। এ থেকে সম্রাট বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হন। বিদেশে ঘনঘন যাতায়াত করা সম্রাট অন্তত ১০টি ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন। তাকে আইনের আওতায় আনার পরপরই তার সহযোগীদেরও খাঁচায় পোড়ে নেয় র‌্যাব। এ ঘটনার তদন্তে আরও অনেকের নাম এসেছে, যারা আত্মগোপনে আছেন। 

জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সিটি নিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাজের সফলতা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। গত এক বছরে র‌্যাব ৩৮৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ইকবাল হোসেন জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। জঙ্গিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৯ জঙ্গির ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন’-এর ব্যবস্থা করা হয়। 

তিনি আরও জানান, গত এক বছরে র‌্যাব বড় ধরনের বেশ কয়েকটি মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এক বছরে মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ হাজার ৯৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ৯৩ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ পিস ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদব্য উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা। 

তিনি জানান, কক্সবাজার গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ দুইজন মিয়ানমার নাগরিককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মাদক কারবারির ট্রাকচাপায় র‌্যাবের একজন সদস্য প্রাণ হারান। 

এ ছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে ৮৮ জন গুজব রটনাকারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব। দুর্নীতি ও অপশক্তির বিরুদ্ধে র‌্যাবের চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে গোল্ডেন মনির এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক দুর্নীতিবাজ ড্রাইভারকেও গ্রেফতার করে বাহিনীটি। করোনা চিকিৎসার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান শাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাবের একটি চৌকস টিম।

র‌্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে সাজাপ্রাপ্ত ৯২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক, গাজীপুরের শ্রীপুরে একই পরিবারের চার সদস্য হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পাঁচ আসামি। চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর কবিরাজ হত্যাকাণ্ডে ছয়জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণধর্ষণের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। একই সময়ে ৫০০ চোরাকারবারি, সাতজন গাড়ি ছিনতাইকারী এবং ৩৯ জন জালনোট প্রস্তুতকারীকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। 

পাচারের শিকার হওয়া ২৬ বাংলাদেশিকে গত বছরের মে মাসে লিবিয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশি পাচার চক্রের মূল হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামালকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এক বছরের ৪৮টি অভিযানে ৮৬ জন মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করে সংস্থাটি।
 
সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে, র‍্যাবের পরিচালিত কয়েকটি অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও চিত্রপ্রযোজক রাজ, উদ্যোক্তা ও ব্যাবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজন অভিনেত্রী ও মডেল। এসব অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক, বন্য প্রাণীর চামড়া, পর্নোগ্রাফি কন্টেন্টসহ নানা আলামত। এসব ঘটনায় দায়ের করা ১০টি মামলার তদন্তভার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে র‌্যাব। 

এমআর/সবুজ/এএমকে
আর্কাইভ