খন্দকার শাহিন, নরসিংদী
নরসিংদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্তের রেকর্ড এটি। এ নিয়ে এই জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ৩৩৫ জনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে যথাযথভাবে মাঠে কাজ করছে নরসিংদীর জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর লোকজন। কিন্তু নরসিংদীর মানুষের উদাসীনতার কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। চলমান লকডাউনে প্রথম দিন থেকে ৪র্থ দিন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও শহর ঘুরে দেখা গেছে কাঁচাবাজারে সাধারণ মানুষের জনসমাগম, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।
এ ছাড়া বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করে বিক্রেতারা ব্যবসা পরিচালনা করছে। শিল্পকারখানা বন্ধ থাকার কথা থাকলে রাতের আঁধারে চলছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন কাপর তৈরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে মানুষের উদাসীনতার ফলেই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা।
সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে সদর উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মাধবদীতে ইজারাদার কর্তৃক পরিচালিত সাপ্তাহিক হাট-বাজার বসেছে। এতে দেখা গেছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত দোকানিরা পূর্বের মতোই বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে আছে। বড় মসজিদ রোড, ফলপট্টি, বটতলা, স্কুল সুপার মার্কেট, কলেজ রোডসহ গরুর হাট মোড়ে এসব দোকানিদের পণ্য বিক্রির সময় দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মুখে মাক্স নেই। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মাছের ও সবজির দোকানগুলোতে গাদাগাদি করে ক্রয়-বিক্রয়ের চিত্র দেখা যায়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এ বাজারে প্রবেশের পূর্বে ক্রেতাদের হাতে জীবাণুনাশকের ব্যবহারও দেখা যায়নি। এ ছাড়া করোনা ঝুঁকি নিয়ে বটতলা মোড় থেকে খড়িয়া, পৌরসভা মোড় থেকে নুরালাপুর, গরুর হাট মোড় থেকে মহিষাশুড়া, পাইকারচরসহ বিভিন্ন গ্রামে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে অটোরিকশায় চলাচল করছে মানুষ।
জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভ্রম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখলেই মানুষ দৌড়ে পালায়। এ জেলার উদাসীন মানুষগুলো যেন প্রশাসনের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলছে। এতে জরিমানা গুনে কিছুক্ষণের জন্য ব্যবসায়ীরা সর্তক হয়। প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে আবার জনসমাগম সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সুশিল সমাজের লোকজন।
নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কথা হয় হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক খোকন কান্তি রুদ্রর সঙ্গে। তিনি জানান, করোনা মোকাবিলায় বহিরাগতদের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাইওয়ে ও নরসিংদী জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিশেষ দল এ জেলার প্রধান প্রবেশ পথে টহল দিচ্ছে। লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে কঠোর লকডাউনের পরেও নরিসংদীতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিলেও প্রতিদিনই বাড়ছে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা। এতে জেলার একমাত্র কোভিড ডেডিকেটেড ৮০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে বেড়েছে করোনা রোগীর চাপ। ৮০ শয্যার বিপরীতে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক করোনা শনাক্ত ও সন্দেহজনক রোগী। শয্যা না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে এসব রোগীদের। এই প্রথম হাসপাতালটিতে এত সংখ্যক রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ জেলায় সর্বশেষ আরও ২৪০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ৩৩৫ জনে।
সিভিল সার্জন জানান, ২৫০টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ১১৪ জন শনাক্ত ও আরটিপিসিআর ল্যাবে ৩৪১টি পরীক্ষা শনাক্ত ১২৬ জন। মোট ৫৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। নমুনার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২১ জন, পলাশে ৩৩ জন, শিবপুরে ৩৮, বেলাবতে ২৩, মনোহরদীতে ৭ জন ও রায়পুরায় ১৮ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৭০০ জন, শিবপুরে ৬২৭ জন, পলাশে ১০৩৯ জন, বেলাবোতে ৩৩২ জন, মনোহরদীতে ৩০২ জন ও রায়পুরাতে ৩৩৫ জন।
নরসিংদী জেলা থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৪৪৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫০৬ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ৭৩ জন ও হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৪৩৩ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭০ জন। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ৩৪, পলাশের ৬, বেলাব ৭, রায়পুরা ৯, মনোহরদী ৫ ও শিবপুরে ৯ জন।
এদিকে গত শনিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে নরসিংদী কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য ১০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেছে বজলুর রহমান অ্যান্ড শাহানারা বেগম ফাউন্ডেশন। এ সময় নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অক্সিজেনের এই ১০০টি বড় সিলিন্ডার নরসিংদী জেলার করোনা মোকাবিলায় বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাবে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রাপ্ত এই সিলিন্ডারগুলো জেলা সদরসহ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য ফাউন্ডেশনসহ এই করোনা মহামারির সময়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সবুজ/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন