• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন ঢাকামুখী মানুষ

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২১, ০২:৪৪ পিএম

পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন ঢাকামুখী মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঈদের ছুটি শেষে দেশব্যাপী আবারও কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের তৃতীয়দিন সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই কঠোর লকডাউনে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকামুখী জনসাধারণ। রাতের পরিবহনে ঢাকায় ফিরে পায়ে হেঁটে নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা যায় যাত্রীদের। 

সাব্বির মিথুন রাতের লঞ্চে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। সকাল ৮টার দিকে লঞ্চ সদরঘাটে ভিড়ে। লঞ্চঘাট থেকে বেরিয়ে দেখেন রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। রিকশারও নেই তেমন কোনো দেখা। দু-একটা রিকশা দেখতে পেলেও দর-দামে না বনায় ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেন তিনি।  

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সিটি নিউজকে বলেন, ধানমন্ডিতে গলির ভিতর ছোট্ট মুদি দোকান আছে।  দোকান থেকে ইনকাম করেই সংসার চালাতে হয়। ঈদে বাড়ি যাই। সরকার আবার লকডাউন দিছে তাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, লঞ্চ থেকে নেমে দেখি কোনো বাস নাই । রাস্তায় রিকশাও নাই তেমন। দুই একটা যা পাইছি একশ টাকার ভাড়া তিনশ টাকা চায়। কী আর করার হাঁটা শুরু করলাম।

মাথায় ব্যাগ নিয়ে মিরপুরের দিকে যাচ্ছেন মধ্যবয়স্ক আরেক যাত্রী মোসলেম উদ্দীন। তিনিও রাতের লঞ্চে ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি বলেন, সরকার লকডাউন দিয়া বাস বন্ধ রাখছে। আমি একটা বাসায় দারোয়ানের চাকরি করি। ঈদে বাড়িতে যাই। কালকে সকালে বাড়িওয়ালা ফোন দিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বলে।  চাকরি বাঁচাতে রাতের লঞ্চে উঠে ঢাকায় আসি। পকেটে এত টাকা নাই যে রিকশা নিয়া মিরপুর যাব। গরিব মানুষ বাধ্য হইয়াই হাঁটা ধরছি।  
 
ঈদ পরবর্তী লকডাউনের প্রথম দিন (২৩ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যায়। 

সদরঘাটের পাশাপাশি সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকেও বিভিন্ন বয়সী যাত্রীদের পায়ে হেঁটে নিজেদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে এক যাত্রী আকলিমা আক্তার। পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী। রাজধানীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করেন।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যান তিনি। সরকার ঘোষিত লকডাউন শুরুর আগে ঢাকা পৌঁছাতে পিরোজপুর থেকে বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে যাত্রা শুরু করেন। মাওয়া ঘাটে ফেরিতে উঠার পূর্বের যানজট ও রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে খণ্ডকালীন যানজটের কারণে ঢাকায় পৌঁছাতে ৭টার বেশি সময় লেগে যায়।  

সিটি নিউজের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, রাস্তায় জ্যামের কারণে বাস লেট করছে।  এখন ঢাকায় এসে দেখি কোনো গাড়ি নেই। বাড্ডায় থাকি। রিকশা যাবে না এত দূর। রাস্তায় সিএনজিও নাই। বাধ্য হয়েই হাঁটা শুরু করছি।  

রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখেই এমন চিত্র দেখা যায়। শিশুসন্তান, নারী, বয়স্কদের নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাসার দিকে যাত্রা শুরু করেন অনেকে । আবার কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্স, ভ্যান ও পিকআপ ভ্যানে রওনা হন গন্তব্যে।

ঈদের আগে শাটডাউন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কঠোর লকডাউনে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে পুলিশের চেকপোস্ট। তবে ঈদ পরবর্তী লকডাউনের প্রথম দিনে তেমন দৃশ্য চোখে পড়েনি।

যেসব জায়গায় চেকপোস্ট রয়েছে, সেগুলোতে গাড়িগুলো চেক করা হচ্ছে। তবে সাজা ও জরিমানা করতে দেখা যায়নি।

রাজধানীর গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে চেকপোস্টের ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আমরা সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। লকডাউন বাস্তবায়নে যেসব স্টেপ নেয়া দরকার, সেই স্টেপ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা আছে, আজ সকাল ৬টা থেকে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যানবাহন বন্ধ আছে। যার যার ব্যক্তিগত উপায়েই যেতে হবে। এ ছাড়া কোনো ওয়ে নাই। 

এ ছাড়াও তিনি আরও বলেন, অনেক যাত্রীই রাতের পরিবহনে ঢাকায় ফিরছেন তাই তাদের কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছাড় দেয়ার বিষয়টি আর থাকবে না। 

ইফাত/নির্জন

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ