• ঢাকা শুক্রবার
    ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ জানালেন রিফাত রশীদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ জানালেন রিফাত রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কমিটির ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই পদত্যাগ করেছেন রিফাত রশীদ। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির এ সমন্বয়ককে ছাত্রসংগঠনটির সিনিয়র সদস্য সচিব করা হয়েছিল।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক স্ট্যাটাসে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে সরে দাঁড়ানো এবং সংগঠনটির আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে মধুর ক্যানটিনে সৃষ্ট বিক্ষোভ ও হাতাহাতির ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

রিফাত রশীদ লিখেন, গতকালকের ঘটনা স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। তার আগেই জানিয়ে রাখি, নতুন ছাত্রসংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই কমিটিতে আমার নাম ঘোষণা করার আগে আমার থেকে কনফার্মেশন নেয়া হয়নি। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলত অনুমতি ব্যতীত আমার নাম কমিটিতে রাখায় আমি এই পদ থেকে সরে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) পুরো সাংগঠনিক সেট আপ, লিডারশিপ থেকে শুরু করে বৈছাআ’র পেজকেও (ফেসবুক পেজ) নতুন ছাত্রসংগঠনের প্রোমোশনে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু বৈছাআকে একটি সংগঠন আকারে যারা এতদিন টেনে নিয়ে গেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি, তাদের অংশগ্রহণ ছিল না খুব একটা ছাত্রসংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে। বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবার কালেক্টিভ একটি ক্ষোভ সেখানে উপস্থিত ছিল। সবার প্রশ্ন ছিল, যদি স্বতন্ত্র উদ্যোগ হয় তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেট আপকে কেন ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্রসংগঠন নির্মানের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্নটাই বারবার করা হয়েছে।

পলিসি ছিল ছাত্রসংগঠন নির্মাণে ঢাবি ক্যাম্পাসকে যারা সংগঠিত করেছে এবং বৈষম্যবিরোধীকে যারা সংগঠিত করেছে তাদের মাঝে টপ ৮টি পদের লিডারপি সমন্বয় করা হবে। পলিসি মেকিংয়ে যে পলিট ব্যুরো তৈরি হবে, তারা হবে ঢাবি ও কেন্দ্রের অর্গানোগ্রাম। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, ঢাবি ব্যতীত অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি, সাত কলেজসহ অন্য কারোই অংশগ্রহণ ছিল না। এইজন্যই একটা কালেক্টিভ ক্ষোভ জন্ম নেয় সবার মাঝে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রেজেনটেটিভরা ইন্টার্নালি ও এক্সটার্নালি অভিযোগ জানায়, সাত কলেজ থেকে আসা বৈছাআ নির্বাহী সদস্য মইনুল-সিনথিয়া থেকে শুরু করে সাত কলেজের প্রায় সব লিডারশিপই নতুন ছাত্রসংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পজিট করার জন্য যেই সার্চ কমিটি ছিল, সেইটা প্রাইভেটকে রিপ্রেজেন্ট করে না বলে প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ এনেছে।

সাত কলেজ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট তিন গ্রুপই নিজেদের টপ চার/ছয় পোস্টের একটায় নিজেদের রিপ্রেজেনটিটিভ চেয়েছিল। ফলত একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রে বৈছাআ টপ চারে দু’জন লিডারশীপ চেয়েছিল এবং টপ ৬-এ চারজন চেয়েছিল। টপ চার পোস্টের দুই পোস্টে জাহিদ আহসান ও আমি, এবং বাকি দুই পোস্টে তৌহিদ সিয়াম ও নাঈম আবেদীনকে চেয়েছিল। টপ পোস্ট বাদ দিয়ে সাত কলেজ, প্রাইভেট, অন্যান্য পাবলিকসহ বাকিদের ক্ষেত্রে কতজন প্রতিনিধি থাকবে এইটা নিয়ে বার্গেইন চলছিল। বৈছাআ থেকে আমার ও নাঈম আবেদীনকে পজিট না করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের জন্ম নেয়। গতকাল ভোরে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ২০ জনকে নেয়ার কমিটমেন্ট দেয়া হলেও মূল তালিকায় ১০ জনকে রাখা হয়েছিল, বাকিদের ইনক্লুড করা হয় নাই। এইটা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদেরকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।

একটা সত্যি সবাই স্বীকার করে নেয়, বৈছাআতে অনেক বেশি লিডার রয়েছে। কিন্তু সংগঠকের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই নতুন পলিটিক্যাল জেনারেশন তৈরি হয়েছে, তাদেরকে ক্যাশ করা ও ক্যারি করানোর একটা গুরু দায়িত্ব আমাদের কাধে এসেছিল। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছিল সবচেয়ে বেশি স্ক্যাটার্ড। কারণ, এই আন্দোলনে তাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল না, তারা স্বতস্ফুর্তভাবেই নেমেছিল। সেই সাথে ঢাকার অলি-গলিতে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বেশি লিডারশিপ তৈরি হয়েছে, যারা হারিয়ে গেলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। ফলত ঢাকা ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সংগঠিত করা বৈছাআর টপ প্রায়োরিটি ছিল। অতীতে সাংগঠনিক দক্ষতা ও আন্দোলনের লিডারশিপের জায়গা থেকে আমাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে সংগঠিত করার। আপনি আমার দেয়া ঢাকা মহানগরের থানা কমিটিগুলোর টপ পোস্টে দেখবেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ও নারীদের রিপ্রেজেন্টেশন অনেক বেশি। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিলের মাধ্যমেই নির্বাচিত করা হয়েছে।’

রিফাত রশীদ দাবি করেন, অভ্যুত্থানের পর সবাই যখন টকশো করে বেড়িয়েছে, থানা-ডিসি অফিস-সচিবালয়ে ঘুরেছে, বিভিন্ন পলিটিকাল স্ফেয়ারে-এম্বাসিতে গিয়েছে, বিদেশে ডেলিগেট হয়ে স্পিচ দিয়ে বেড়িয়েছে, আমি তখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে গিয়েছি, ঢাকার অলিগলিতে গিয়েছি। এইটা আমার রাজনৈতিক এম্বিশনেরই অংশ। অভ্যুত্থানের পর আমি এই এম্বিশনের পথেই হেঁটেছি। এইটা আমার চয়েজ ছিল।

তিনি বলেছেন, ‘নতুন ছাত্র সংগঠনে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল আমি সদস্য সচিব হবো। এরপর আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে মুখ্য সংগঠক, পরবর্তীতে সেখান থেকেও সরিয়ে মুখপাত্র করার প্রস্তাবনা করে। সবশেষে সেখান থেকেও মাইনাস করে আমাকে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আসার প্রস্তাব করে। মুখপাত্র পোস্ট পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমি কালেক্টিভ স্বার্থের কথা ভেবে মেনে নিয়েছি। যখন যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয় তখন আমি স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেই, এই ছাত্র সংগঠনে আমি থাকবো না। এইটা জানিয়ে দেয়ার পর আর কোনো মিটিং, সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি এবং লিটারেচার টিমের কোনো কাজের সাথেই যুক্ত ছিলাম না। আমি পুরোপুরি এই সংগঠন গঠনের সমস্ত প্রসেস থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। প্রাইভেট ও মহানগর থেকে সার্চ কমিটিতে রিপ্রেজেনটেটিভ দিয়ে গিয়েছিলাম। তাদেরকে পজিট করানো আমার দায়িত্ব ছিল, আমি সেই দায়িত্ব পালন করে সরে গিয়েছি।

আমাকে যখন প্রতিদিন নতুন প্রস্তাবনায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে, এইটা ক্ষোভ জন্ম দেয় সেই সকল গ্রুপের মাঝে যারা আমার হাত ধরে প্রথমবার রাজনীতিতে এসেছে। তারা চাইছিল আমি আমার সদস্য সচিব পদ আঁকড়ে ধরে রাখি, কিন্তু আমি জানিয়ে দেই সংগঠনের স্বার্থে আমাকে যদি সংগঠন থেকে সরেও যেতে হয় আমি সেইটাই করবো। আমি আসলে সেটাই করেছিলাম।

বাকের-কাদের ভাই গতকাল সকাল পর্যন্ত আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি যুগ্ম-আহ্বায়ক বা যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আসবো না বলে সাফ জানিয়ে দেই। সেইসাথে জানাই যে, প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যপক ক্ষোভ বিদ্যমান আছে। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হৃদি আপুকে নিয়ে তাদের একটা এলিগেশন রয়েছে (সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পেজ থেকে তারা এই নিয়ে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভও জানায়)। আমি এই কনসার্ন দেই যে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষাথীরা ক্ষুব্ধ, বৈছাআর অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও ক্ষুব্ধ। প্রাইভেটের পোলাপান পাল্টাপাল্টি প্রেস কনফারেন্স করতে পারে। আপনারা তাদের দাবিগুলো নিয়ে ভাবেন, তাদের সাথে বসে ডিসিশন নেন।’

আর্কাইভ