প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ১২:২২ পিএম
রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলায় রবিবার সকালে আদালতে ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ছিলো।
এদিন সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। সোয়া ৯ টার পর তাদের এজলাসে তোলা হয়। তিন জনের মধ্যে সামনে ছিলেন শাহজাহান ওমর।
এই সময় সাংবাদিকরা তাদের ছবি তুলতে গেলে। তখন শাহজাহান ওমর বলেন, ‘এই ফটো তোলোস কেন?’ পরে তাদের এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলেন শাহজাহান ওমর। আইনজীবী-পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করেন। কখনও হেসেছেন। আইনজীবীদের কাছে মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। জানতে চান তিনি এজাহারনামীয় আসামি কি না।
তবে অনেকটায় নিরব ছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং আছাদুজ্জামান মিয়া। তারা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নিরবে। আছাদুজ্জামান মিয়া আইনজীবীর সাথে একটু কথা বললেও প্রায় পুরোটা সময় নিরব ছিলেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সকাল ৯ টা ৩৮ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। ৯ টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তখন ছবি তোলার বিষয়ে কি বলেছিলেন জানতে চাইলে হাস্যোজ্জল শাহজাহান ওমর বলেন, তোমাদের কাজই হলো ফটো তোলা। ফটো তোলো। আমাদের আপত্তি নাই।
এর আগে ২১ নভেম্বর সকালে কাঠালিয়া থানার একটি মামলায় শাহজাহান ওমরকে গ্রেফতার করা হয়।
শাহজাহান ওমর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠালগ্নের সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ থেকে ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১০ অক্টোবর ২০০১ থেকে ৭ এপ্রিল ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি ৭ এপ্রিল ২০০২ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৩ সালে ২৮শে অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। ১৫ নভেম্বর ২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৩০শে নভেম্বর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ধার্য হয়। শাহজাহান ওমর ২৯ নভেম্বর ২০২৩ জেলখানা থেকে মুক্তি পান। ৩০ নভেম্বর ২০২৩ আওয়ামী লীগে যোগদান করে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে গেলে পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দেয়। তাতে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।