• ঢাকা বুধবার
    ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

অভ্যুত্থানের ৬ মাস: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর দ্রব্যমূল্যে হতাশ মানুষ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৯:৫০ এএম

অভ্যুত্থানের ৬ মাস: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর দ্রব্যমূল্যে হতাশ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক পর্যায়ে মিলেমিশে একাকার হয় ছাত্র-জনতা। রিকশাচালক, দিনমজুর, শ্রমিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রবাসী, ব্যবসায়ী এমনকি বেকার- সবাই নেমেছিলেন রাস্তায়। সোচ্চার হয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জনতার পক্ষে দাঁড়ান সেনা সদস্যরা; মাঠে নামেন সাবেক কর্মকর্তারা। আর, আওয়ামী লীগের শাসনামল জুড়ে নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছিলো আন্দোলনের অভিজ্ঞ ঢাল।

রিকশার পাটাতনে ঝুলে আছে, মাথায় পতাকা বাধা তরুণ। কলেজ ছাত্র গোলাম নাফিজ। প্রতিবাদীর বুলেটবিদ্ধ দেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটেছেন একজন রিকশাচালক। শেষমেষ আর প্রাণে বাঁচাতে পারেননি নাফিজকে।

সেই রিক্সারচালক নূর মোহাম্মদ। অভ্যুত্থানের ৬ মাসে মানুষের এতো এতো দাবি আর অবরোধ দেখে বিরক্ত তিনি।রিক্সাচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, এতোদিন পাবলিক কই ছিলো? মুখে তালা দেয়া ছিলো? মূল কথাই কেউ বলেন না, পাতিলে ভাত শেষ। এতো এতো দাবি করে কি হবে বলে প্রশ্ন করেন এই রিক্সাচালক।

ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে যখন চলছে হত্যাযজ্ঞ, তখন বসে থাকেননি প্রবাসীরা। প্রতিবাদী অবস্থান নেন দেশগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। হুঁশিয়ারি দেন, গণহত্যা বন্ধ না করলে কেউ আর রেমিটেন্স পাঠাবেন না। ৬ মাস পর তাদের কী হিসেব-নিকেশ?

জাপান পরবাস সম্পাদক কাজী ইনসানুল হক বলেন, দেশ যারা চালাচ্ছে, সেখানে ভালো-মন্দ লোক রয়েছে। তারা যে খুব ভালভাবে দেশ চালাচ্ছে, এমনটা মনে হচ্ছে না।

জাপানের ইউকোহামা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আব্দুল মালেক বলেছেন, প্রশাসনিক ও আইন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাঁজাতে হবে। যাতে করে মানুষ দেশে আইনের শাসন পায়। প্রশাসন যেন দেশের জন্য কাজ করে; কোন ব্যক্তি কিংবা দলের নয়। সেই সাথে দেশে যেন শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসে।

আন্দোলনকারীদের ওপর যখন নির্মম গুলিবর্ষণ, তখন জনতাকে রক্ষায় সামনে এগিয়ে আসেন কিছু সেনা সদস্য। কারফিউ ভেঙ্গে নেমে আসেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারাও।

তাদেরই একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডক্টর মনিরুল ইসলাম আকন্দ। তিনি বলেন, ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে তরুণ অফিসাররা বলে কাকে গুলি করবো, আমাদের ভাইরা তো ওইদিকে দাঁড়ানো, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে গুলি (ওপেন ফায়ার) করবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের পাশে থাকবে। এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা যেভাবে মিছিল করেছিলো, সেই পদক্ষেপ পুরো দেশকে একটি শক্তি দিয়েছে।

অভ্যুত্থান পরবর্তী ৬ মাসে কী তার বিশ্লেষণ? এ প্রসঙ্গে ড. মনিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, পুলিশের কাজ পুলিশকেই করতে হবে এবং সেনাবাহিনীর কাজ সেনাবাহিনীর করতে হবে। কাউ কারো কাজ করতে পারবে না। সেই সাথে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নির্বাচিত সরকার পারবে না কিংবা নির্বাচিত সরকারের কাজ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা অবস্থা ঠিক করতে হবে। এখনও দোসররা একটিভ এবং ষড়যন্ত্র করছে। শক্ত হাতে দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক রোষানলের শিকার ডান, বাম, মধ্যম বা ইসলামপন্থি দলগুলো এখন রাজনীতিতে সক্রিয়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীর বিশ্লেষণ, অভ্যুত্থান পরবর্তী কাজগুলো চলছে অনেক ধীরে। তিনি বলেন, সাবেক সরকারের দোসররা এখনও বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গেছে। তারা অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর অবস্থা সৃষ্টি করছে। এছাড়াও সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটা ঘাটতি আছে।

জামায়াতে ইসলামীর বিশ্লেষণ, মৌলিক ইস্যুতে এখনো অভাব সুদৃঢ় ঐক্যের। নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মানুষের সাথে কথা বলতে পারছি। সেই সাথে, এখন মানুষের কাছে আমাদের কথা পৌঁছানোর সুযোগ হচ্ছে। সমগ্র জাতির সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সুফল পেয়েছে।

আন্দোলনে শহীদ আর আহতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপি বলছে, আগে দরকার জনতার সরকারেরর কাছে ক্ষমতার হস্তান্তর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য একটি সরকারে চালিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিবে, এটা জনগণ ও বিএনপির প্রত্যাশা। যদি অযথা বিলম্ভ হয়, তাহলে একটা সময় জনগণ প্রতিবাদ করবেই।

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জিনিসপত্রের দাম কমানো জনতার অগ্রাধিকার।

আর্কাইভ