প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী ছাত্র শহিদ আবু বকর সিদ্দিক পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও ‘স্ক্যাম’ তথা জালিয়াতি করে হত্যার দায় এড়ানো হয়েছে বলে দাবি বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের। ২০১০ সালে শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু বকর।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত প্রথম ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
সংগঠনটি বলছে, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আবু বকর হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই ১৪ বছর আগের ঘটনা হলেও এখন হত্যা মামলাটি দায়ের থেকে বিচার প্রক্রিয়ার সব কিছু রিওপেনিং বা পুনরায় শুরু করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবু বকর হত্যার বিচার ও তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে ৯দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ।
দাবিগুলো হলো, শহিদ আবু বকর সিদ্দিক হত্যা মামলা রিওপেনিং তথা শুরু থেকে মামলার আবেদন, অভিযুক্ত আসামি ও সাক্ষী নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; মামলায় শাহবাগ থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিমসহ হামলায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে আসামি করতে হবে।
শহিদ আবু বকর হত্যার সুপ্রিম রেসপন্সিবল অথরিটি হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইজিপি নুর মোহাম্মদ, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক ও রমনা জোনের ডিসিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ও প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম আবাসিক হলে পুলিশ প্রবেশ করিয়ে শহিদ আবু বকর সিদ্দিককে হত্যা ও অন্য ছাত্রদের নির্যাতনের পরিস্থিতি তৈরি করায় তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘর্ষে লিপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরসহ বিগত ১৬ বছর নির্যাতন নিপীড়নে জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে।
শহিদ আবু বকরকে স্মরণে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে স্মৃতি মিনার তৈরি করতে হবে। শহিদ আবু বকর সিদ্দিকের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে; তার পরিবারের সদস্যদের সরকারি খরচে ভিআইপি মর্যাদায় হজ করাতে হবে। পরিবারের সদস্যদের আজীবন ফ্রি চিকিৎসা ও গণপরিবহণে চলাচলের বন্দোবস্ত করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি ওয়ান ইলেভেন বিরোধী ছাত্র সংগঠন নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্লার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এরপর পুলিশ হলের কক্ষগুলোকে টার্গেট করে গুলি বর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে আত্মরক্ষা করতে শহিদ আবু বকর সিদ্দিকসহ ৪০৪ নম্বর কক্ষের ৮ বাসিন্দা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন ঠিক ওপরে পাঁচতলার ৫০৩ নম্বর কক্ষের বারান্দা থেকে পুলিশের গুলিতে আবু বকর সিদ্দিক গুলিবিদ্ধ হন।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিউল আলম মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, আবু বকর সিদ্দিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অস্থায় ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সকাল ৯টা ২০মিনিটে আবু বকর সিদ্দিক শাহাদাত বরণ করেন।
ওই সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নিয়মিত হামলার মুখে থাকা থাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আবু বকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার থাকতে পারেনি। এ সুযোগে শহিদ আবু বকর হত্যাকাণ্ডকে সরকার, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও বশংবদ মিডিয়া সুনিপুণ স্ক্যামে পরিণত করে ফেলে।
সংবাদ সম্মেলনে শহিদ আবু বকর সিদ্দিক হত্যার বিচার নতুন করে আদায়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান ও আহ্বায়ক খোমেনী ইহসানের অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করেন আবদুল ওয়াহেদ।
এর মধ্যে আনিছুর রহমান ২০১০ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। খোমেনী ইহসান নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি আবু বকর সিদ্দিককে শহিদ আখ্যা দিয়ে তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের হত্যার হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছাড়া হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অধ্যয়ন থেকে বঞ্চিত হন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব ডা. মাসুম বিল্লাহ ও সদস্য মামুনুর রশিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান এবং বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।