প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ০৬:৫৮ পিএম
আহমেদ ফয়েজ, পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক
কাজে উত্তরা যাচ্ছেন তিনি। রাজধানীর কলাবাগান থেকে বাসে ওঠেন।
বাসে উঠে প্রতি সিটেই
যাত্রী বসা দেখতে পান
তিনি। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেই
উত্তরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
বাস
কিছু দূর যেতে না
যেতেই কন্ডাক্টর আসেন ভাড়া আদায়
করতে। দাঁড়িয়ে থাকা ফয়েজসহ অন্যদের
নিকট থেকে বর্ধিত ভাড়া
দাবি করেন। এতে কয়েকজন ভাড়া
পরিশোধ করলেও বাদ সাধেন অনেকে।
তাদের দাবি, দাঁড়িয়ে থেকেও কেন বর্ধিত ভাড়া
আদায় করব। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে
যাত্রীদের জিম্মি করেই ভাড়া আদায়
করেন বাস কন্ডাক্টর। চিত্রটি
দেখা যায় বিকাশ পরিবহন
নামক একটি বাসে। বাসটি
রাজধানীর আজিমপুর থেকে আবদুল্লাহপুর রুটে
যাতায়াত করে।
করোনা
সংক্রমণ রোধে দেশে গত
১ জুলাই থেকে টানা ১৪
দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি
করে সরকার। বিধিনিষেধ কার্যকরে বন্ধ রাখা হয়
গণপরিবহন।
পবিত্র
ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলমান
বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। এই শিথিলতা ১৫
জুলাই থেকে ২৩ জুলাই
ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্যকর
থাকবে। এ সময় দেশের
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বজায় রাখতে স্বাস্থ্যবিধি
মেনে গণপরিবহন চালু করার অনুমতি
দেয় সরকার।
বিধিনিষেধ
শিথিলতার প্রথম দিন ১৫ জুলাই
স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি রাজধানীর
বাসগুলোতে। সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ অনুযায়ী, দুই সিটে একজন
যাত্রীকে বসানোর কথা থাকলেও এর
ভিন্নরূপ দেখা যায় বাসগুলোতে।
দুই সিটে দুই যাত্রী
বসানোর পাশাপাশি যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থেকেও গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
এক
সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী বহনে
পরিবহনগুলোর আয়ের ভারসাম্য বজায়
রাখতে ৬০ শতাংশ ভাড়া
বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় সরকার। তবে
বাসগুলোতে সিট ফাঁকা না
রেখে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা সত্ত্বেও
বর্ধিত ভাড়া পরিশোধ করতে
হচ্ছে যাত্রীদের।
বাসটিতে
দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আহমেদ
ফয়েজ বলেন, ‘বাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছি।
সিটগুলোও ফাঁকা নেই। কিন্তু আগের
চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে
হচ্ছে। আগে উত্তরায় যেতে
ভাড়া দিতে হতো ৪০
টাকা। আর এখন দিতে
হয় ৬০ টাকা।’
তিনি
আরও বলেন, ‘যেহেতু যাত্রী বেশি নিচ্ছে, সেহেতু
বর্ধিত ভাড়া না নিলেও
পারত।’
বাসটির
আরেক যাত্রী মাকসুদা ইসলাম। কাজ করেন বনানীতে
থাকা একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায়।
তিনি বলেন, ‘সাইন্স ল্যাব থেকে বাসে উঠেছি।
রাস্তায় নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী
নিচ্ছে তারা। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী
ওঠে। তাতে ভঙ্গ হচ্ছে
স্বাস্থ্যবিধি। তা ছাড়া যাত্রী
বেশি নিয়েও সরকার কর্তৃক বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে
তারা। ফলে যাত্রীদের পড়তে
হচ্ছে ভোগান্তিতে।’
যাত্রী
বেশি নেয়া সত্ত্বেও বর্ধিত
ভাড়া আদায়করণের কারণ জানতে কথা
হয় নাম প্রকাশে অনীহা
থাকা বাসটির কন্ডাক্টরের সঙ্গে।
তিনি
বলেন, ‘যাত্রীরা উঠছেন, আমরা না করতে
পারি না। রাস্তার বিভিন্ন
স্থানে চেকার আছেন। বাসে যাত্রী যতজন
থাকেন ততজনই লিখে দেন তারা।
এ জন্য বেশি ভাড়া
তুলতে হয়। যাত্রীরা অনেক
সময় এ নিয়ে তর্ক
করেন। কিন্তু তাদের থেকে আগের ভাড়া
নিলে বাকি টাকা নিজের
পকেট থেকে জমা দিতে
হবে।’
তার
কথার বিরোধিতা করে মাহমুদ নামের
এক যাত্রী বলেন, ‘বাসচালক আর কন্ডাক্টররা ইচ্ছাকৃতভাবেই
যাত্রী বেশি তোলে। আর
বলা চলে বাসের ভেতরে
যাত্রীদের জিম্মি করেই ভাড়া আদায়
করে তারা।’
টানা
১৪ দিন কঠোর বিধিনিষেধ
থাকার পর শিথিলতার প্রথম
দিনে গাড়ির চাপ বেশি থাকায়
রাজধানীর সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের। যানজটের কারণে কোথাও কোথাও যাত্রীদের ১ ঘণ্টারও বেশি
সময় ধরে সড়কে আটকে
থাকতে দেখা যায়।
এ
দিন আন্তঃনগর ও আন্তঃজেলা বাসের
পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন
চলাচল শুরু হয়।
ইফাত/সবুজ/এম. জামান