• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টোদিকে হাঁটছেন: উপদেষ্টা মাহফুজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম

জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টোদিকে হাঁটছেন: উপদেষ্টা মাহফুজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টোদিকে হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পাঠকের উদ্দেশে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:-

মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের পর কী হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোনো সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কী কী ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু সেসবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে। যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতো উনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই আমরা ’৭২-পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেব।

মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনি হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সব মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সাথে গাদ্দারি!

আমরা ভুলে যাই, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ১০ বছরের ইতিহাস ছিল, ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবিরোধী, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের ইতিহাস।

কিন্তু সে জন্য আধিপত্যবাদবিরোধী কোনো মুক্তিযোদ্ধা খোদ মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার দুঃসাহস করেননি। এখানেই পিকিংপন্থীদের সাথে অন্যদের তফাত। 
এ দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেই এ দেশে রাজনীতি করতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হলে আপনাদের আমরা বাংলাদেশের পক্ষের, গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মেনে নেব না।

আর এ গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের পরে ফ্যাসিস্ট  মুজিববাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, বাকশাল ২.০-এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। এ গণ-অভ্যুত্থানে বরং শেখ পরিবার ও মুজিববাদী প্রকল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধ রিক্লেইমড হলো।

বাংলাদেশপন্থীদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থী হতে হবে, তবে এটাও সত্য যে মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাঁবেদার হয়ে উঠেছিল। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছে।  মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারা ও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।

জুলাই সুযোগ নিয়ে এসেছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। লীগের সাথে বিচারকার্য সম্পন্ন করে রিকন্সাইল করতেও আমরা আগ্রহী ছিলাম। অথচ দিল্লির আশ্রয়ে থেকে দেশবিরোধী চক্রান্ত করাকেই তারা বেছে নিল। আপনারাও ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই ’৭১ ও ’২৪ কে নিঃশর্ত ও নিরঙ্কুশ মেনে এগোতে হবে।

পুনশ্চ, জুলাই বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-নির্বিশেষে ছাত্র নেতৃত্বে সর্বজনের অভ্যুত্থান। মধ্যপন্থী ও ভবিষ্যতমুখী এ অভ্যুত্থানে ডান-বাম, চরম বা নরম পন্থার আশ্রয় নেই। সুতরাং বাইরের আসকারায় কেউ জুলাই বিপ্লবীদের ট্যাগ বা হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং জুলাই বিপ্লবীদের সাথে মৈত্রী করুন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের লাইনে আছে, ইতিহাসের পক্ষে আছে, আপনারা জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টো দিকে হাঁটছেন। আসুন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এবং রাষ্ট্র সংস্কার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই মিলে অংশগ্রহণ করি।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ