প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০১:২১ পিএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের আগস্টে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে একে একে বের হয়ে আসছে হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র।
একটি তদন্তকারী কমিশনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার সরকারের অধীনে গোপন কারাগারে শিশুদেরও বন্দি রাখা হতো এবং তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হত। এসব শিশুদের মধ্যে এমনও ঘটনা রয়েছে, যেখানে তাদের মায়ের দুধ পান করতে দেয়া হয়নি, যাতে তাদের মায়েদের মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা যায়।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৭ বছর বয়সি হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ঢাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, যিনি ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের মাধ্যমে তার পতনের পর পুরনো মিত্র ভারতে পালিয়ে যান।
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে; যার মধ্যে শত শত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আরও শত শত লোককে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুম অন্তর্ভুক্ত।
কমিশন বলেছে, তাদের কাছে এমন একাধিক যাচাইকৃত ঘটনা রয়েছে যেখানে নারীরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছে। ২০২৩ সালেও এই ধরনে ঘটনা ঘটেছে। একজন গর্ভবতী মহিলাকে তার দুই ছোট বাচ্চাসহ গোপন বন্দিশালায় আটকে রেখে মারধর করা হয়েছিল। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।
‘কখনো ফিরে আসেনি’
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদেরকে গোপন বন্দীশালার সেই কক্ষটি দেখিয়েছেন যেখানে তাকে শৈশবে তার মায়ের সঙ্গে রাখা হয়েছিল। এই বন্দীশালাটি ছিল র্যাবের। তার মা আর ফিরে আসেনি।
আরেকটি ঘটনায়, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল। শিশুটির বাবার ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ‘মানসিক নির্যাতনের এক রূপ হিসেবে’ শিশুটিকে মায়ের দুধ পান করতে দেয়া হয়নি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনার সরকার জোরপূর্বক গুমের ঘটনা অস্বীকার করতো। তাদের দাবি, নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন।
কমিশন বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপহরণ করা প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ। কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ‘কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী অফিসারদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও, তাদের সাক্ষ্য ব্যবহার করে জড়িত বাহিনীকে শনাক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে, আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব।’