• ঢাকা রবিবার
    ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

সাবেক মন্ত্রী-এমপির মধ্যে গ্রেপ্তার ৫৭, বাকিদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

সাবেক মন্ত্রী-এমপির মধ্যে গ্রেপ্তার ৫৭, বাকিদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা

সিটি নিউজ ডেস্ক

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫৭ জন এমপি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৩১ জন মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সূত্র পুলিশ, দলীয় ও কারাগার।

সূত্র মতে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে চলে যান।

তাঁদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা চলমান।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপি রয়েছেন ৪০ জন। বাকি তিনজন একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি।

তাঁরা সবাই কারাগারে। বাকিরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৩১ জনই দলের শীর্ষ নেতা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুরু হয়।

সেদিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক (প্রধানমন্ত্রীর) বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁদের এক হকার নিহতের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় ডিএমপি।

এরপর ১৬ আগস্ট রাতে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে আটকের পর একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ ছাড়া ২৯ আগস্ট সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ৩ অক্টোবর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে আটকের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যাঁরা দেশ ত্যাগ করতে পারেননি, তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‍‍`এই অবৈধ অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষের ওপর জুলুম শুরু করেছে। আওয়ামী লীগকে ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের নেত্রীর নামে ২৫০টির বেশি হত্যা মামলা দিয়েছে, যা হাস্যকর। হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে ঢালাও মামলা হচ্ছে। নিজের নামে কত মামলা, সেটাও আমি জানি না।‍‍`

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে গত ৭ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার হয়েছে ১২ হাজারের বেশি। পুলিশ সদর দপ্তর এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর গতকাল কালের কণ্ঠকে এ তথ্য দেন।

মামলায় উল্লেখযোগ যেসব এমপি গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারদের মধ্যে দ্বাদশ সংসদের ৩৯ জন এমপি রয়েছেন। তাঁরা হলেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, নীলফামারী-২; নুরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড়-২; রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও-১; মাজহারুল ইসলাম সুজন, ঠাকুরগাঁও-২; টিপু মুনশি, রংপুর-৪; রাগেবুল হাসান রিপু, বগুড়া-৬; সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-১; আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৩; আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ-৪; জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-৩; শামসুল হক টুকু, পাবনা-১; ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-১; রশীদুজ্জামান, খুলনা-৬; আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-২; আলী আজম মুকুল, ভোলা-২; আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলা-৪; জাহিদ ফারুক, বরিশাল-৫; শাহজাহান ওমর, ঝালকাঠি-১; আমির হোসেন আমু, ঝালকাঠি-২; আবদুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-১; আবুল কালাম আজাদ, জামালপুর-৫; আহমদ হোসেন, নেত্রকোনা-৫; সালমান এফ রহমান, ঢাকা-১; কামরুল ইসলাম, ঢাকা-২; সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-৯ (জামিনে আছেন);

কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৫; নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, নরসিংদী-৫; গাজী গোলাম দস্তগীর, নারায়ণগঞ্জ-১; ফারুক খান, গোপালগঞ্জ-১; শাজাহান খান, মাদারীপুর-২; এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৩ (জামিনে আছেন); ইমরান আহমদ, সিলেট-৪; সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, হবিগঞ্জ-৪; গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩; আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪; সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা-৯; দিপু মনি, চাঁদপুর-৩ ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি আবদুর রউফ রয়েছেন। বাকি তিনজন এমপি একাদশ জাতীয় সংসদের। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী গ্রেপ্তার, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আব্দুর রহমান বদি (একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি)।

শীর্ষ নেতা যাঁরা কারাগারে

সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু,

সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, টিপু মুনশি, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আবদুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম সুজন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আসাদুজ্জামান নূর, কামরুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ইমরান আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ও রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম,

সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, ফরহাদ হোসেন, শহিদুজ্জামান সরকার, মাহবুব আলী, কামাল আহমেদ মজুমদার, জাকির হোসেন ও কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম ওরফে জ্যাকব ও আরিফ খান জয়, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক এমপি ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, সাবেক মন্ত্রী আবদুস শহীদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ।

দেশে-বিদেশে যাঁরা পলাতক

বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও বরিশাল-৪ আসনের সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথ ভারতে অবস্থান করছেন। বরিশাল-৬ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিক পলাতক। বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নান, বগুড়া-৫ আসনের এমপি মজিবর রহমান মজনু এবং বগুড়া-৭ আসনের এমপি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, বগুড়া-২ আসনে জাপার এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনের এমপি খাঁন মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধন এবং বগুড়া-৪ আসনের এমপি রেজাউল করিম তানসেনও আত্মগোপনে।

মেহেরপুর-২ আসনের এমপি আবু সালেহ মো. নাজমুল হুদা ও সাবেক এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনও আত্মগোপনে। কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এমপি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পাণ্ডে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি বিপ্লব হাসান দুজনই আত্মগোপনে। চাঁদপুর-১ আসনের এমপি ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য সাংবাদিক মুহাম্মদ সফিকুর রহমান পলাতক। চাঁদপুর-৫ আসনের এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম দেশেই আছেন।

জয়পুরহাট-১ আসনে সামছুল আলম দুদু পলাতক ও জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাবেক হুইপ দেশের বাইরে পলাতক। রাজশাহী-১ আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনের নেতা শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী-৫ আসনের আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও এমপি শাহরিয়ার আলম আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ ছাড়া পাবনা-৩ আসনের সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, পাবনা-৪ আসনের সাবেক এমপি গালিবুর রহমান শরীফ, পাবনা-৫ আসনের সাবেক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স আত্মগোপনে আছেন।

আর্কাইভ