প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম
শেখ হাসিনা সরকারের পতন ছাড়াও গণঅভ্যুত্থানের বড় লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এরই অংশ হিসেবে সংবিধান, নির্বাচনসহ ৪ সংস্কার কমিশন নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সুপারিশমালায় সংস্কারের নানা প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনগুলো।
সুপারিশে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিশিষ্টজনরা। তবে সংসদের মেয়াদ চার বছর, একই ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান, সংসদ নেতা ও সরকারপ্রধান না করার সুপারিশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ বলছিলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্ষমতায় আসার পর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ দেখানোর তাড়না থাকে। এই উন্নয়নের জন্য চারবছর যথেষ্ট সময় নয়। তাই সরকারের মেয়াদ পাঁচবছর রাখাটাই উত্তম হবে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সুপারিশে সুনির্দিষ্টভাবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কথা বলা হলেও কীভাবে নির্বাচনগুলো হবে বা যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো স্পষ্ট নয়।
কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এই সুপারিশ প্রসঙ্গে ড. মাহবুবউল্লাহ বললেন, তিন বা চার মেয়াদ কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে স্বৈরতান্ত্রিক হওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে সাজা হলে প্রার্থিতা ও দলের পদ না রাখার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এই প্রস্তাবে বিশিষ্টজনেরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার বিষয়ে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
দোষীদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করলে খুব বেশি সমস্যা হবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ।
তবে নির্বাচনে প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য ১০ ভাগ কোটা রাখার সুপারিশকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যুব সমাজের ক্ষমতায়নের নামে কিছু তরুণকে সুবিধা দেয়া যাবে না।
এ নিয়ে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রার্থী হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ২১ করার প্রস্তাবটির উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। এটি অনেক বিতর্কের জন্ম দেবে। এক্ষেত্রে তরুণ সম্প্রদায়কে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। গুটিকয়েক তরুণকে মাথায় রেখে কাজ করলে হবে না।
দেশে একজন শিক্ষার্থীর মাস্টার্স পাশ করছে অন্তত ২৩ বছরে, তা উল্লেখ করে ড. মাহবুবউল্লাহ বলেন, সেক্ষেত্রে ২১ বছরের প্রস্তাবটি সন্দেহজনক।
বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সংস্কারের সুপারিশ কার্যকর ও নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন দেশের এই দুই জ্যেষ্ঠ নাগরিক।