নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসটি প্রতিরোধে ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ছিলো সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (১৪ জুলাই) মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) শিথিল থাকবে। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এছাড়া ভোর থেকে শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচলও।
গত মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে গণপরিবহন চলতে পারবে। এজন্য বাস ও লঞ্চ বুধবার মধ্যরাত, আর ট্রেন চলাচল শুরু হবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে। এ খবরে গত দুই দিন ধরে টার্মিনালগুলোয় ব্যাপক কর্মব্যস্ততা দেখা গেছে।
ট্রেন চলাচল:
২৩ জুন থেকে বন্ধ ছিলো ট্রেন চলাচল। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ভোর পৌনে পাঁচটায় রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বলাকা কমিউটার৷ এরপর ভোর পাঁচটায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার৷ এরপর সিডিউল অনুযায়ী সবগুলো ট্রেন ছাড়বে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সরোয়ার।
মোহাম্মদ মাসুদ সরোয়ার জানান, ঈদে মোট ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর এবং ১৯ জোড়া লোকাল ট্রেন যাত্রীদের সেবা দেবে। যাত্রীদের ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷
যেসব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে-সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/ তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, হাওড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, সীমান্ত এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস এবং পঞ্চগড় এক্সপ্রেস৷
যেসব মেইল/কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে-ঢাকা-চট্টগ্রাম, কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, সুরমা মেইল, তিতাস কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, মহুয়া কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার, উত্তরা এক্সপ্রেস, রাজবাড়ী এক্সপ্রেস, বিরল কমিউটার, বগুড়া কমিউটার এবং কলেজ ট্রেন৷
বাস চলাচল:
লকডাউনের কারণে ২৮ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন চলাচল। এরই মধ্যে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় ১৭ দিন পর আবারও সড়কে গণপরিবহন চলতে শুরু করেছে। অর্ধেক যাত্রী আর ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিয়ে বুধবার (১৪ জুলাই) মধ্যরাত থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়।
তবে সড়কে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
নির্দেশনাগুলো হলো: মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না; ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না; গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মাস্ক পরিধান/ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে; যাত্রার শুরু ও শেষে বাস-মিনিবাসগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে; এছাড়াও যানবাহনের যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালপত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে; সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গণপরিবহনে যাত্রী উঠা-নামা করতে হবে।
নৌপরিবহন চলাচল:
১৩ জুলাই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, বুধবার (১৪ জুলাই) মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান পুনরায় চলাচল বন্ধ থাকবে।
তাই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের বরণ করে নিতে নবরূপে সেজেছে রাজধানীর সদরঘাট। টার্মিনালের গ্যাংওয়ে, পন্টুনগুলো সংস্কার ও নতুন পন্টুন বসানো হয়েছে। সদরঘাটে বুধবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা থেকে চাঁদপুরের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। আর বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত ১২টা থেকে চাঁদপুরের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। সদরঘাটে আগে ১৮টি পন্টুন ছিল এখন ২৬টি করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে পন্টুনগুলো প্লেট করা ও পরিসর বাড়ানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন তিন দিন সীমিত পরিসরে বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। এর আওতায় বন্ধ থাকে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল।
টিআর/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন