প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
২০২৩ সালের শেষের দিকে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুইজ্জু। নির্বাচনে তার স্লোগান ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’। মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর, ভারত এবং দ্বীপরাষ্ট্রটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা- রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) মুইজ্জুকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের কৌশল তৈরি করতে তৎপর হয়েছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। গত সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মালদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে মনোনিবেশের ইঙ্গিত দিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় সেনা বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। মুইজ্জু বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, এমনকি সম্ভাব্য সামরিক সহায়তা চুক্তির ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে, ভারতীয় গোয়েন্দারা মুইজ্জুকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের উপায় অনুসন্ধানের জন্য মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে।
‘ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ শিরোনামের একটি অভ্যন্তরীণ নথি- ওয়াশিংটন পোস্ট হাতে পেয়েছে। এতে মুইজ্জুকে অভিশংসনের জন্য একটি বিস্তারিত কৌশল ও রূপরেখা পাওয়া গেছে। পরিকল্পনায় মুইজ্জুর দলের কয়েকজনসহ ৪০ জন সংসদ সদস্যকে ঘুষ দেয়ার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং অপরাধী চক্রকে অর্থ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অভিযানের আনুমানিক ব্যয় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮৭ মিলিয়ন মালদ্বীপের রুপি ভারত থেকে দেয়ার কথা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক মাস ধরে গোপন আলোচনা সত্ত্বেও, ষড়যন্ত্রকারীরা পর্যাপ্ত সংসদীয় ভোট পেতে ব্যর্থ হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, মালদ্বীপকে অস্থিতিশীল করার বিষয়ে সতর্ক থাকায়, অভিশংসন প্রচেষ্টার জন্য অর্থায়ন বা এগিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারত বনাম চীন: একটি বৃহত্তর ক্ষমতার লড়াই
মালদ্বীপের ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরে ভারত ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চলমান লড়াইকে তুলে ধরে। উভয় দেশই কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য ঋণ, অবকাঠামো প্রকল্প এবং রাজনৈতিক জোট ব্যবহার করেছে। ভারতের জন্য, মালদ্বীপের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা তার বিদেশ নীতির মূল ভিত্তি।
মালদ্বীপের ১,২০০টি দ্বীপপুঞ্জ, যা গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের জন্য বিস্তৃত পথ; যেটি দীর্ঘদিন ধরেই চীন-ভারতের কৌশলগত স্বার্থের বিষয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে, চীনা বিনিয়োগ সামরিক স্থাপনায় রূপান্তরিত হতে পারে, যার ফলে ভারত মহাসাগরের উপরে বেইজিং উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে।
২০২৩ সালের নির্বাচন এবং ফলাফল:
মুইজ্জুর প্রচারণা ভারতবিরোধী মনোভাবকে পুঁজি করে ২০২৩ সালের নির্বাচনে সোলিহকে পরাজিত করে। তার বিজয় ভাষণ বিদেশি সামরিক উপস্থিতি অপসারণে দৃঢ় সংকল্পকে আরও জোরদার করে। এটি ভারতের সাথে তীব্র উত্তেজনার ক্ষেত্র তৈরি করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, মুইজ্জুর অভিশংসনের আলোচনা শুরু হয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সাথে যুক্ত এমডিপি আইন প্রণেতা হুসেন শাহিম এবং দীর্ঘদিনের ভারতীয় মিত্র আহমেদ ইয়াসা। বিরোধী দলকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, অপর্যাপ্ত সংসদীয় সমর্থন এবং তহবিল সমস্যার কারণে চক্রান্তটি ব্যর্থ হয়।
তবে তার আগেই, মুইজ্জু ১১ জন বিরোধী আইন প্রণেতাকে ঘুষ দিয়ে নিজের পক্ষে টেনে নেন এবং তার পদ সুরক্ষিত করেন। ফলে প্রকাশ্যে তিনি ভারতবিরোধী বক্তব্য আরও তীব্র করে তোলেন, ঘোষণা করেন, ‘আমরা ছোট হতে পারি, কিন্তু তার মানে এই নয়, আমাদের ওপর অত্যাচার করার অনুমতি দেয়া হবে।’