প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে দাঁড়িয়েছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু। তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন তারা। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার ধাক্কায় দেয় তাদের। ঝড়ের গতিতে ছিটকে পড়েন তিনজন। ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ। গুরুতর আহত হন মেহেদী হাসান ও অমিত সাহা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ভোরে একটি ফোনে দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পান মুহতাসিমের মা-বাবা। এই ধাক্কা সামলে নিতে পারছেন না মুহতাসিমের মা রাইসা সুলতানা এবং বাবা মাসুদ মিয়া।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মুহতাসিমের লাশ নেওয়া হয় গ্রিনরোডের ওই বাসায়। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও মুহতাসিমের সহপাঠীরা।
একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে আসেন রাইসা সুলতানা। মুহতাসিমের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে মা রাইসা সুলতানা বলেন, ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আবার আমাদের দেখা হবে।’
ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন রাইসা সুলতানা। তিনি বিলাপ করে বলেন, কামরুল নামে মুহতাসিমের এক বন্ধু ভোরে ফোন করে জানায়, মুহতাসিম দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ছেলের মৃত্যুর খবর প্রথম বিশ্বাস করেননি মা রাইসা সুলতানা।
তিনি বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে যায় মুহতাসিম। কথা ছিল ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। বাসায় না ফেরায় সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে ফোন দিই। ছেলে বলে পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে। রাতে হলে থাকবে, বাসায় ফিরবে না।’ ছেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি ঘুমাতে যান।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়াও। অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের লাশের পাশে বসে মাসুদ মিয়া বলেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই ছিল মাসুদ মিয়া ও রাইসা সুলতানা দম্পতির সংসার। দুই সন্তানের পড়াশোনাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন তারা। ছেলে মুহতাসিম মাসুদ (২২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে পড়ে ঢাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে। তাদের দুজনকে নিয়েই গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন তারা।