প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম
রাজধানীর উপকণ্ঠ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টায় গ্রেপ্তার তিনজন পুলিশকে জানান, এক কিডনি রোগীকে সহযোগিতার জন্য ডাকাতি করতে আসেন তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ সাঈদ তিন ডাকাতের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘তারা কোনো চলচ্চিত্র বা ভিডিও গেমস দেখে ফ্যান্টাসিতে ভুগে এই কাজ ঘটিয়েছে। তারা ১৮ লাখ টাকা ব্যাগে নিয়েছিলো। এই টাকা দিয়ে একজন কিডনি রোগীকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এই টাকা দিয়ে আইফোন কেনার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে তারা যে রোগীর ঠিকানা দিয়েছেন সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। তাদের বক্তব্য আদৌ সত্য কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’
পরে কিডনি রোগীর বিষয়ে তদন্ত শেষে শুক্রবার পুলিশ জানায়, ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন দিকে`চোখ ফেরাতে` কিডনি রোগীর নাটক সাজায় ডাকাতেরা। তারা এখন স্বীকার করেছেন- শুরুতে কিডনি রোগীকে সহযোগিতার যে তথ্য দিয়েছিলেন তা বানোয়াট ছিল। মূলত ব্যাংক থেকে টাকা লুট করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, কিডনি রোগীর যে বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ওরা বলেছিল তার সত্যতা মেলেনি। তারা মাস খানেক ধরে ব্যাংক ডাকাতির ছক কষছিল। ব্যাংক তারা রেকিও করে আসে।
ওসি আরও বলেন, ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন লিয়ন মোল্লা নিরব। আরাফাত ও সিফাতকে টোপ দিয়ে এই কাজে সে ব্যবহার করেছে। তাদের মোটরসাইকেল ও আইফোন কিনে দেওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার নিরব গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মোল্লার ছেলে। নিরব পেশায় একজন গাড়িচালক। অপর দুই কিশোরের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকায়। তাদের একজন একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আরেকজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
এদিকে চুলকুটিয়া জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরব-এর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া একই সময়ে গ্রেপ্তার দুই কিশোরের জবানবন্দি নেওয়া হয়। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস তাদের আদালতে হাজির করে। এরপর গ্রেপ্তার লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরবের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড এবং দুই কিশোরের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে দুই কিশোরের জবানবন্দি রেকর্ডের অনুমতি দেন।
ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী রতন বিশ্বাস। তিনি জানান, ডাকাতরা নিজের রক্ষায় বোমা বানানো অভিনয় করেছিল, নানান হুমকি দিয়েছিল। মাথায় পিস্তল সাদৃশ্য তাক করে রেখেছিল।
ব্যাংকের গ্রাহক বাবুল খান বলেন, ব্যবসার টাকা জমা দিতে বেলা দুইটার দিকে তিনি রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় যান এবং ক্যাশ কাউন্টারে এক কর্মকর্তার কাছে টাকা জমা দেন। তিনি যখন টাকা গুনছিলেন, তখন মাস্ক ও চশমা পরে তিনজন ব্যাংকে ঢোকেন। তারা সঙ্গে করে একটি তালা নিয়ে এসেছিলেন। ঢোকার পরপরই তারা ওই তালা দিয়ে ব্যাংকে ঢোকার দরজা বন্ধ করে দেন এবং ব্যাংকের দুজন নিরাপত্তাপ্রহরীকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখেন। ব্যাংকে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রাহকসহ প্রায় ১৮ জন ছিলেন। তারা সবাইকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে এক জায়গায় নিয়ে মাথা নিচের দিকে উপুড় করে বসতে বলেন।
বাবুল খান বলেন, ওই তিনজন সবার মোবাইল নিয়ে নেন। কারও মোবাইলে কল এলে তারাই (তিনজন) রিসিভ করছিলেন। পরে তারা ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে তার ছিঁড়ে ফেলেন। এ ছাড়া কিছু আসবাব ভাঙচুর করেন। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুজন পিস্তল তাক করে সবাইকে পাহারা দেন। বাকি একজন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাগে ভরছিল। যখন তারা টের পান বাইরে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন, তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন তারা ব্যাংকের পেছনের দিকে থাকা লোহার গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্রিল ভাঙতে পারেননি। তখন তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন, মূল দরজার বাইরে বের হওয়ার অন্য কোনো পথ আছে কি না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বের হওয়ার পথ শুধু একটি বলে জানান। এরপরও তারা বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন।