প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে তাতে তার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নামও জড়িয়েছে।
এ খবর বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। রীতিমতো তোলপাড় অবস্থা ব্রিটিশ গণমাধ্যম। বিবিসির পাশাপাশি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট, দ্য টেলিগ্রাফ ও ডেইলি মেইল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্প থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাতের অভিযোগে যে তদন্ত চলছে তাতে ব্রিটিশ শ্রমমন্ত্রীরও নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রমমন্ত্রী হিসেবে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজারে দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বও পালন করে থাকেন। তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে চুক্তিতে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষের লেনদেন হয়েছিল।
২০১৩ সালের ছবিতে দেখা যায়, ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে টিউলিপ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। চলতি বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান টিউলিপ সিদ্দিকের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিস্তৃত তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে মতামতের জন্য টিউলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। লেবার পার্টিও এ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি রাজনীতিক ববি হাজ্জাজের বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই তদন্ত শুরু হয়েছে। টিউলিপের মা শেখ রেহানা সিদ্দিকসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময়জুড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনাকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে দেখা হতো। তার সরকার নির্মমভাবে ভিন্নমত দমন করেছিল। দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নতুন সরকার একাধিক অপরাধের অভিযোগ এনেছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তাকে খুঁজছে।
এছাড়া দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক মন্ত্রীসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার পরিচালক সৈয়দ ফারুক বলেন, ‘এসব দাবি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’।
২০১৫ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দল থেকে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনে এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। বিবিসি বলেছে, তাদের হাতে আসা আদালতের নথিতে দেখা গেছে, ববি হাজ্জাজ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতা ও সমন্বয়ের অভিযোগ আনেন।
নথি অনুসারে, অনিয়মের ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যাংক এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর একটি জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টিউলিপ এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সবমিলিয়ে ববি হাজ্জাজের অভিযোগ, হাসিনার পরিবার ও মন্ত্রী এই প্রকল্প থেকে ৩৯০ কোটি পাউন্ড পাচার করেছেন।
‘লেবার মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক কট আপ ইন বাংলাদেশ করাপশান প্রুব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবার সরকারের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের দুর্নীতির তদন্তে জড়িয়ে পড়েছেন। দেশটির সরকার কোটি কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করার অভিযোগে তার খালা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
‘লেবার এমপি ফেইসেস বিং কট আপ ইন বাংলাদেশ এমবেজলমেন্ট ইনভেস্টিগেশান’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের এক তদন্তে জড়িয়ে পড়েছেন লেবার সরকারের মন্ত্রী টিউলিপ।
ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডেইলি মেইল বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিজের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের মুখে শহর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।
মিডল ইস্ট আই লিখেছে, বাংলাদেশে রাশিয়ার অর্থায়নে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেয়ার অভিযোগের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।