প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:৫২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মাধ্যমেই তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশন প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
সোমবার ঢাকা থেকে সাইফ হাসনাত এবং নয়াদিলি থেকে মুজিব মিশালের ‘এক্স বাংলাদেশি লিডার অর্কেস্ট্রেটেড ম্যাস ডিস্যাপারেন্সেস, ইনকুয়ায়ারি ফাইন্ডস’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের নানা নির্যাতন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
হাসিনার পতনের পর দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে গুম হওয়াদের পরিবার প্রিয়জনের খবর জানতে সরকারি অফিস এবং সামরিক ব্যারাকের বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। গুম হওয়া অনেকেই বন্দি দশা থেকে ফিরে এসে তাদের অভিজ্ঞতা সবার কাছে তুলে ধরেছেন। এমন কিছু ঘটনা নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুম কমিশনের সদস্যরা বলেছেন যে, আগস্টের শেষের দিকে কাজ শুরু করার পর থেকে তারা গুমের বিষয়ে ১,৬০০টিরও বেশি রিপোর্ট পেয়েছেন। তবে তারা ধারণা করছেন এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও দুই বা তিনগুণ বেশি।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গুমের ঘটনা ‘সেন্ট্রাল কমান্ড স্ট্রাকচার’ এর অধীনে এবং ‘একেবারেই অধরা রাখতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পদ্ধতিগতভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল।’ এটি ‘টপ-ডাউন’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো। অর্থাৎ, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরাই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কমিশন বন্দিদের রাখা হয়েছিল এমন কমপক্ষে আটটি গোপন স্থাপনা চিহ্নিত করেছে এবং এসব স্থানে নির্যাতনের পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতন বলে উল্লেখ করেছে।
শনিবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উপস্থাপন করা প্রাথমিক প্রতিবেদনে কমিশন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কমিশনের সদস্য নুর খান লিটন বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, চেইন অব কমান্ডের বিবরণ এবং কীভাবে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি।’ এসব বিবরণ গুমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার দলের নেতারা অবশ্য কমিশনের প্রাপ্ত তথ্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাসিনার শক্তিশালী পদক্ষেপকে কলঙ্কিত করার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, ‘এটি আসলে বানোয়াট গালগল্প। শেখ হাসিনার চরিত্রহরণ এবং দেশের মানুষের সামনে তার সম্মান ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়।’
প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ড. ইউনূসের কার্যালয় সাংবাদিকদের দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে গুম করতে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রায়ই সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। গুম হওয়ার পর, তাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকৃতি করতে তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে ফেলত।
যাদের ছেড়ে দেওয়া হতো, তাদের প্রায়ই মুখবন্ধ রাখার শর্তে ছাড়া হতো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য লিটন বলেন, তদন্তকারীরা অনুমান করেছেন এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত ১,৬০০টি অভিযোগের চেয়ে প্রকৃত গুমের সংখ্যা দুই বা তিনগুণ বেশি হতে পারে।
লিটন বলেন, কমিশন ভিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশদ বিবরণ এড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভিকটিম সুরক্ষার কোনো আইন নেই। ‘তাই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে।’