• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪, ১০:১৮ এএম

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত তিমুর লেস্তের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা।

আজ সোমবার সকাল ৭টা ১২ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। এ সময় তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। একই সময় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পরে বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর। পরবর্তীতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। সোমবার। ৫৪তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। আজকের দিনটিতে বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম বিজয় দিবস। এই দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হবে।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্র, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা আয়োজন করবে। ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) এবং শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে– আজ ভোরে দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও সেখান থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘সর্বজনীন কনসার্ট’। এ উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হবে। এ ছাড়া গতকাল রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা করেছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে রয়েছে– সকাল ১০টায় দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে এবং মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বিজয়নগর থেকে বিজয় র‌্যালি।

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও তাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার বঙ্গভবন ও এর আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, বিদেশি কূটনীতিক এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচলের জন্য বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলাচলকারীদের বিকল্প পথ অনুসরণের অনুরোধ জানানো হলো।

এতে বলা হয়, গুলিস্তান আহাদ বক্স থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে, আলিকো গ্যাপ থেকে দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা ও রাজউক ক্রসিং পর্যন্ত সব ধরনের গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকবে, পার্ক রোডের উত্তর প্রান্ত থেকে ইত্তেফাক মোড় অভিমুখী কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করবে না। শাপলা চত্বর ও দৈনিক বাংলা থেকে রাজউক-গুলিস্তানগামী সব বাস দৈনিক বাংলা, ইউবিএল ক্রসিং, প্রেস ক্লাব হয়ে চলাচল (আসা-যাওয়া) করবে কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে এবং দৈনিক বাংলা থেকে রাজউক অভিমুখী কোনো বাণিজ্যিক গাড়ি চলাচল করবে না।

আর্কাইভ