প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাইম ম্যাগাজিনকে দীর্ঘ এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এতে তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ফেরা নিয়ে কথা বলেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে তবে তার আগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব আমরা।’
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ওই সাক্ষাতকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরে বললাম, ‘ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরাও জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। অন্যদিকে হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে সাড় ৩ হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে। এছাড়া হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের বিষয়ে ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস বলেন, তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে আবার কথাও বলছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তিনি শেখ হোসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত চেয়েছেন। যদিও কেউ বিশ্বাস করে না যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে রাজি হবেন।
সংখ্যালঘুদের নিয়ে ট্রাম্পের এক্স পোস্টে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না, আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।
বিদেশে আওয়ামী লীগের হাজার কোটি ডলার পাচারের অর্থ উদ্ধারে কাজ করবেন বলে টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। এছাড়া দেশকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি একটি খারাপ এবং স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ। এজন্য তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা এবং রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
তবে ইউনূস সরকার নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কোনো তারিখ দিইনি। প্রথমে আমাদের রেলগুলো ঠিক করতে হবে যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। সংস্কারই পুরো বিপ্লবের মূল। এ কারণেই আমরা বিপ্লব পরবর্তী একে আমরা বাংলাদেশ ২.০ বলছি।