প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৫৮ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সব রাজনৈতিক দলের সম্মতি থাকতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা জরুরি।
ভবিষ্যতে যে দল সরকার গঠন করবে তারা যেন সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং বিরোধী দলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ’ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহায়তায় ‘ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম : রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষ এ বৈঠক সঞ্চালনা ও সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার।
বক্তারা বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখতে হবে। নির্বাচিত সরকার সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তারা আরও বলেন, একটা সত্যিকারের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। তার আগে রাজনীতিবিদদের হাতে দেশ ছেড়ে দেওয়া জনগণ নিরাপদবোধ করছে না। সংস্কারে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই নয়ছয় করার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নাগরিকের নিজেদের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলে, রাজনীতিকরাও অনেক দায়িত্বশীল হবেন।
সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। এছাড়া পরে আরও চারটি কমিশন গঠন করা হলেও প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি। আগের ছয়টি কমিশনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশের প্রতিবেদন প্রদান করতে বলা হয়েছে। এরপর সরকার সেই সুপারিশের ওপর অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেবে এমন বলা হয়েছে।
লিখিত প্রবন্ধে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আগে রাষ্ট্র সংস্কার, না আগে নির্বাচন, এই বিতর্কে না গিয়ে সংস্কার ও নির্বাচন ভাবনাকে কয়েকটি ধাপে ভাবা যেতে পারে। প্রথমত, সংস্কার কমিশনগুলো কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ; দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক অংশীজনদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনাক্রমে সংস্কারের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ; তৃতীয়ত, কোন সংস্কারগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করবে এবং কোন সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকার করবে তা নির্ধারণ; চতুর্থত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখতিয়ারভুক্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি; পঞ্চমত, নির্বাচিত সরকার কর্তৃক কোন সংস্কারগুলোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় সনদ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর-যাতে যে দল সরকার গঠন করবে তারা যেন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় এবং বিরোধী দলগুলোও যেন তাতে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে যেমন সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনের পরেও তা চলমান রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, দেশে একটি পরিবর্তন আনার জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধর মতো সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। একটা সত্যিকারের পরিবর্তন বা সংস্কার আনতে হবে। দেশের ন্যূনতম কোনো সংস্কার না করে রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া অনেকে নিরাপদবোধ করছে না। তাই নির্বাচনে যাওয়ার আগে কিছু জরুরি সংস্কার করা দরকার।
সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই নয়ছয় করার সুযোগ থাকা চলবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, নাগরিকের নিজেদের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত হলে, রাজনীতিকরাও অনেক দায়িত্বশীল হবেন। তিনি বলেন, আদর্শিক বা কর্মপন্থা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা থাকতে পারে, তবে মৌলিক বিষয়গুলোতে সব রাজনৈতিক দলের সমঝোতা থাকতে হবে। তা না হলে সংস্কারচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, রাজনীতিবিদরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে, অথচ সাধারণ মানুষ সামান্য চিকিৎসাসেবাও পায় না। দেশের এ পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে সাধারণ মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, সংস্কার প্রস্তাব আসার অপেক্ষায় না থেকে নির্বাহী আদেশে যেসব পরিবর্তন করা যায়, সরকার সেই পরিবর্তনগুলো করতে পারে। বলা হয়ে থাকে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠু ছিল কিন্তু নির্বাচন যাই হোক, সুষ্ঠু গণতন্ত্র ছিল না। এ বিষয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি সচেতন নয়। রাজনৈতিক দলের ভেতরেও সংস্কার করতে হবে।
সাংবাদিক মাহাবুব কামাল বলেন, বাংলাদেশের যে সমস্যা, তার স্বল্প ও মধ্যমেয়াদের কোনো সমাধান নেই। এজন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন। জনসাধারণের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি জনসংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্যও কাজ করতে হবে।