প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম
গাড়ির চাকা ঘুরলে তাদের
দৈনন্দিন জীবনের চাকাও সচল থাকে। গাড়ির
চাকা বন্ধ হলে থেমে
যায় তাদের জীবনের গতি। বলছি পরিবহন
শ্রমিকদের কথা। করোনাকালীন লকডাউনের
কবলে জীবন-জীবীকা নিয়ে
কঠিন সমস্যায় পড়েছেন তারা। জীবন বাঁচাতে অনেকে
তাদের শেষ সম্বল বিক্রি
করে দিচ্ছেন।
পরিবহন
সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর হিসাবে দেশে বাস ও
ট্রাক মিলিয়ে ৫ লাখ গণপরিবহন
রয়েছে। যাতে যুক্ত অন্তত
৩০ লাখ শ্রমিক। লঞ্চ,
স্টিমার, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য পরিবহন মিলিয়ে এই সংখ্যা ৫০
লাখেরও বেশি। এসব শ্রমিকদের প্রায়
সবাই ‘যেদিন কাজ, সেদিন বেতন’ এর
ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ জুলাই
থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা
করেছে সরকার। তারপর থেকে এক পয়সাও
রোজগার হয়নি আনোয়ার হোসেনের।
তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টেই কোনোরকম
দিন যাচ্ছে। গাড়ি বন্ধ হয়ে
গেলে আমাদের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।
একজনের আয়ের ওপর সবার
খরচ নির্ভর।’
পরিবহন
শ্রমিক আনোয়ার বলেন, ‘আগে মাঝেমধ্যে মাছ
মাংস খেতাম, এখন শাক সবজির
বাইরে ভালো কিছু খেতে
পারি না। কোনোরকম জীবন
চলতেছে। কারও কাছে টাকা
পয়সাও ধার পাই না।
কীভাবে যে দিন চলে,
সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব
না।’
একাধিক
পরিবহন শ্রমিক জানিয়েছেন, টাকার অভাবে তিন বেলার খাবার
হয়ে গেছে অনিয়িমত। দিনের
খাবারে ভাত, ডাল-আলু
ভর্তা অথবা শাক ছাড়া
কিছু জুটাতে পারছেন না। পরিচিতজনদের কাছ
থেকে ধারও মিলছে না
বলে অস্থিরতার মধ্যে সময় পার করছেন।
অনেকেই টাকার অভাবে নামমাত্র মূল্যে টিভি, ফ্যানসহ বাসার জিনিসপত্র বিক্রি করা শুরু করেছেন।
ঢাকার
অন্যতম বাস টার্মিনাল গাবতলীর
নিথর অবস্থা সহসাই দেখা যায় না।
লকডাউনে অলস দুপুর, চোখে
ক্লান্তির ঘুম আসলেও, হতাশা
চাহনিতে। আবেগ সামলাতে না
পেরে নিজেদের দুর্দশা বর্ণনা করেন বাস শ্রমিক
তারেক দিনার। চাকা বন্ধ তাই
বন্ধ আয়ও।
তার
ছোট্ট সংসার দেখতে গিয়ে জানা গেল
বাক প্রতিবন্ধী স্ত্রীর নাক ফুলটি বিক্রি
করে বাজার করেছেন গত সপ্তাহে। ৬
মাসের সন্তানের ওষুধ কিনতে বেচতে
চলেছেন ঘরের আসবাবপত্র।
তারেক
দিনারের বাড়ির মালিকও জানালেন, বাস টার্মিনালে আরও
শ্রমিক থাকে তার বাড়িতে,
যারা গেল কয়েকমাস ভাড়া
দেয়া তো দুরের কথা
দু’বেলা খেতেও পাচ্ছেন
না।
একই
অবস্থা বাস চালক শফিকেরও।
অন্যদের চোখে দেখা গেল
অজানা ভয়, দুর্দশার কথা
গণমাধ্যমে বলে পিটুনিও খেয়েছেন
কয়েক শ্রমিক। শ্রমিকরা বলছেন, নিরুপায় লকডাউন আরও লম্বা হলে
সামনে ঘোর অন্ধকার অপেক্ষা
করছে তাদের জন্য।
জেডআই/নির্জন