প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
জাতীয় পার্টি চেৃয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন- সবাই অংশ না নিলে আমরা নির্বাচনে যাব না। চিকিৎসার নামে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আটক করা হয়েছিল। আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলাম।
সোমবার বিকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, রাসুল (সা.) পৃথিবীর জন্য নেয়ামত স্বরুপ এসেছিলেন। রাসুলের (সা.) এর উন্নত চরিত্র অনুসরণেই মানুষের মুক্তি নিহিত। রাসুল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণে সবার প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আমি নিজে মন্ত্রী ছিলাম... আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭০ জন নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমি নিজেও নির্বাচন বর্জন করেছি, ২০১৪ সালের সংসদে আমি ছিলাম না। পরবর্তীতে আমাকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। কারণ, পল্লীবন্ধু এরশাদের নির্দেশে আমি সবাইকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলাম, আমার কথায় ২৭০ জন নির্বাচন বর্জন করেছিল।
জিএম কাদের বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন না করলেও, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির অনেক নেতা আমাকে বলেছেন- কাদের সাহেব, আপনি তো ঘরকাও না ঘাটকাও না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। সরকারের সমালোচনা করার কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আমাকে হঠাৎ উপনেতা পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মত সরকারের সমালোচনা অনেকেই করেনি। তখন একটি কথার জন্য একটি মানুষ গুম হয়ে যেত, কিন্তু আমরা সরকারের সমালোচনা করেছি। ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের দলের মাঝে সরকারই বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। আমাদের ব্ল্যাকমেইল করে, জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছিলাম নির্বাচন সঠিক হবে না। নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে প্রতিদিনই আমরা বলেছি... নির্বাচন সঠিক হয়নি।
কাদের বলেন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি সমর্থন দিয়েছে। ১ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়েছে... আমি ৩ জুলাই সংসদে বক্তৃতায় বলেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যৌক্তিক। আমার নির্দেশে জাতীয় ছাত্র সমাজ সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল। রংপুরে আমাদের একটি ছেলে শহীদ হয়েছে। রংপুরে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। ছাত্রদের সহায়তা করতে আমাদের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে যৌথসভা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছি, আটক ৬ সমন্বয়কের মুক্তি দাবি করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলেছি ছাত্রদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অন্যায় এবং সংবিধান বিরাধী। আমি সব সময় বলেছি... বাংলাদেশে বৈষম্য হচ্ছে। এদেশের মানুষ বৈষম্যবিরুদ্ধে ব্রিটিশ, পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। সর্বশেষ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি, মুক্তি পাইনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশের জনগণ যেকোন ত্যাগ স্বীকার করবে আমরা তা আগে থেকেই বলেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমাদের মুক্তি দিয়েছে। বৈষম্যহীন ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক একটি দেশ হবে, এটা এদেশের মানুষের চাওয়া ছিল। বৈষম্যহীন দেশের জন্য আমাদের দেশের ছাত্র জনতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম, অথচ আমাদের নামে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর দোয়া ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অ্যাভোকেড মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, উপদেষ্টা ড. নরুল আজহার শামীম, ড. গোলাম মোস্তফা, এ্যা. মমতাজ উদ্দীন, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, রফিকুর আলম সেলিম, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, আহাদ চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক, অ্যাড. হামিদ ভাষানী, শামীম আহমেদ রিজভী।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর দোয়া ও আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জাতীয় ওলামা পার্টির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া এবং জাতীয় পার্টির যুগ্ম ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ ক্বারী ইসারুহুল্লাহ আসিফ।
সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হুমায়ুন খান, আনোয়ার হোসেন তোতা, এমএ হান্নান, সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, আজহারুল ইসলাম সরকার, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, দ্বীন ইসলাম শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের বাদল, শেখ সরোয়ার হোসেন, আলমগীর হোসেন, জাকির হোসেন, হুমায়ুন কবির শাওন, ওহিদুজ্জামান ওহিদ, আনোয়ার হোসেন শান্ত, অ্যাড. আবু ওহাব, মেহেদী হাসান শিপন, সোলায়মান সামি, হুমায়ুন কবির মুন্সি, আল আমিন সরকার, নাজমুল হাসান রেজা, আব্দুর রহিম, আবুল বাশার, বজলুর রহমান, সাখাওয়াত হোসেন দুলাল, জাতীয় সমাজ এর সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম খান।