• ঢাকা বুধবার
    ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

‘আগাম বার্তা না দিয়ে বাঁধ খোলার কারণ জানতে চাওয়া হবে’

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ১১:১২ এএম

‘আগাম বার্তা না দিয়ে বাঁধ খোলার কারণ জানতে চাওয়া হবে’

সিটি নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগাম সতর্কবার্তা না দিয়ে বাঁধ ছেড়ে দেওয়ায় যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হবে। একই সঙ্গে চলমান বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা এবং বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেল সোয়া ৩টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রেজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা আরো বলেন, সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হবে। ফাউন্ডেশনের প্রধান হবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাউন্ডেশনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। এই ফাউন্ডেশনের কাজ হবে নিহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের সুচিকিৎসা ও তাদের পুনর্বাসন।

এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখা, যাতে প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম জানতে পারে প্রকৃতপক্ষে এখানে কী ঘটেছে। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, একটি আইন প্রণয়ন করে তার অধীনে ফাউন্ডেশন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘বৈঠকে দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ভুক্তভোগী মানুষকে কিভাবে সহযোগিতা করব এবং সরকারের ভেতরে কিভাবে কাজগুলোর সমন্বয় হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বন্যার কারণ কী এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্যোগ আমরা কিভাবে এড়িয়ে চলতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বন্যা উপদ্রুত প্রতিটি জেলা পরিদর্শনে যাবেন। এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় করবেন। ত্রাণ, পানি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় করতে হবে।

উজানে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময় বন্যাকবলিত এলাকায়ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে ভবিষ্যতে আগাম সতর্কতা কিভাবে পাওয়া যাবে, আমাদের আগাম সতর্ক করা হয়েছে কি না, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে জনগণকে সতর্ক করার মাধ্যমে জীবন ও সম্পদহানি রোধে রাষ্ট্রগুলো কিভাবে কাজ করতে পারে, নির্দিষ্ট কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

রেজওয়ানা হাসান আরো বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আজ (গতকাল) প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখানে বন্যার বিষয়টি আলোচনা করা হবে। যতক্ষণ না বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা শেষ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্যা উপদেষ্টা পরিষদের নজরদারিতে থাকবে।

রেজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের নামকরণের নীতিমালা বা আইনের কথা ভাবছে উপদেষ্টা পরিষদ। যখন সরকারি অর্থ ব্যয় করে কোনো প্রকল্প হবে বা কোনো একটা কিছু স্থাপন করা হয়, সেই প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে কী কী নীতিমালা অনুসরণ করা হবে তা নির্ধারণ করা জরুরি। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে—নামকরণের বিষয়টি একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আসতে হবে। নামকরণের ক্ষেত্রে জনমতের প্রতিফলন যেন হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নামকরণের বিষয়টি রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যায়। একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তা যাতে আর না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে। জনগণের টাকায় নেওয়া প্রকল্পে যাতে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়, এমন নামকরণ যাতে হয় তা নিশ্চিত হতে চাই। আগে স্থাপিত প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন হবে কি হবে না তা, আইনি কাঠামো তৈরির সময় ঠিক করব।’

উপদেষ্টা বলেন, যাঁরা বিভিন্ন সময় গুম হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত, কারা দায়ী তা তদন্ত করে দেখতে একটি কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন গঠনের বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, অন্যান্য উপদেষ্টা এবং আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে যে আইনি প্রক্রিয়াগুলো এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, বিভিন্ন অপরাধে যাঁরা অভিযুক্ত হচ্ছেন, সেই আইনি প্রক্রিয়াগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নির্ধারণ করা হবে। আমরা যাতে মানবাধিকারের সব বিষয় সমুন্নত রেখে বা সম্মান করে তারপর আইনগত  প্রক্রিয়া চালাতে পারি, সে জন্য কোথায় কোন নির্দেশনা যাওয়া দরকার তা এই কমিটি ঠিক করে জানিয়ে দেবে।’

রেজওয়ানা হাসান বলেন, বিভিন্ন মানুষ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। প্রতিবাদ তাঁরা করতেই পারেন, এটা তাঁদের অধিকার। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক বছর তাঁরা অনেক কিছুই বলতে পারেননি। প্রতিবাদের কারণে জনজীবনে যাতে বাড়তি দুর্ভোগ বা অসুবিধা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাঁদের প্রতিবাদের সঙ্গে সরকারও কিভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে, বিশেষ করে প্রতিবাদটা কোথায় এবং কেমন করে হলে ভালো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য না করে তাদের মুখপাত্রের সঙ্গে সরকারের মুখপাত্র বসে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা কমিটি কাজ করবে।

রেজওয়ানা হাসান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে বিভিন্ন দেশের নৌযান ঢুকে পড়ছে। তারা আমাদের সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের কোস্ট গার্ডকে বলা হবে, যাতে কোনো দেশের নৌযান বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে ঢুকতে না পারে।’

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে।

তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা আশা করব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের জনগণবিরোধী এ ধরনের নীতি থেকে সরে আসবে। ভারতের এই নীতি নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ক্ষুব্ধ।

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণকে কিভাবে একত্রে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন করছে, কথা বলে আসছে। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ভেতর কোনো টানাপড়েন যাতে না রাখা হয় এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাতে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করা হয়।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে যেভাবে সবাই জেগে উঠেছে, তেমনিভাবে বন্যা মোকাবেলায় আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ব।’

আর্কাইভ