নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। নতুন করে সংস্থাটি আরেকটি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। খাল উন্নয়নে দুটি প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ২২২ কোটি টাকা। এই কাজের জন্য আবারও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে নতুন প্রকল্প নিচ্ছে। এতে ওয়াসা বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজে আসছে না।
জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশন ২৬টি খালের দায়িত্ব পায় গত ৩১ ডিসেম্বর। এরপরই ঢাকা ওয়াসার খাল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রশ্ন তোলেন দুই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা। এরপর সৃষ্টি হয় বড় জটিলতা। তিন সংস্থার জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ দফায় দফায় সভা করে। মন্ত্রণালয়ের সভায় তিন সংস্থার সম্মতিতে প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা ২০১৮ সালে 'ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন' নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৬টি খালের সংস্কার, পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর মিরপুর ও উত্তরা এলাকার ৩০ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া। সে লক্ষ্যে ওই প্রকল্পের ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৩২ ভাগ। এ প্রকল্পের মোট আকার ছিল ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে পাঁচ খাল প্রকল্প নামে ঢাকা ওয়াসা আরেকটি প্রকল্প নেয়। এটি হাজারীবাগ, বাইশটেকি, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি এলাকায় খালের ভূমি অধিগ্রহণ ও খনন বিষয়ে। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে শুরু এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর অগ্রগতি হয়েছে ৭ শতাংশ। প্রকল্প সমাপ্ত করার আগ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খালের দায়িত্ব বুঝে পায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সে সময় এমন সিদ্ধান্ত ছিল যে, দুই সিটি ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খাল সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, জনবল ও প্রকল্প বুঝে নেবে। কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হয় চলমান দুটি খাল প্রকল্প বুঝে নেয়ার সময়। এগুলোর কাজের মান নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন তোলেন সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা।
এরপরই বেঁকে বসেন ঢাকা ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে দুটি প্রকল্প বিদ্যমান অবস্থায় শেষ করার প্রস্তাব করে। এ জটিলতা নিরসন করতে না পারায় প্রকল্প সমাপ্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প বুঝে নিলে ডিএনসিসি জটিলতায় পড়তো জানিয়ে এক প্রকৌশলী জানান, ঢাকা ওয়াসার খাল প্রকল্পের কাজের মান আমরা নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি। ওই অবস্থায় প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নিলে পরে জটিলতায় পড়তো ডিএনসিসি। এজন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের সভায় এ বিষয়ে উত্থাপন করেছি। সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে খারাপ মনে হলেও সিটি করপোরেশনের জন্য ভালো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, 'ঢাকা ওয়াসায় চলমান দুটি খাল উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। সে দুটি প্রকল্প হস্তান্তর নিয়ে দুই সিটির সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে ওই দুটি খাল প্রকল্প বিদ্যমান অবস্থায় সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।'
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, খাল প্রকল্প দুটি সমাপ্ত করা হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন, মন্ত্রণালয় ও ঢাকা ওয়াসার যৌথ সভায় সার্বিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মাঝপথে সমাপ্তি ঘটলেও প্রকল্পের সার্বিক বিবেচনায় ভালো হয়েছে। দুই সিটি নতুনভাবে তাদের মতো করে আরও বড় পরিসরে প্রকল্প নিতে পারবে।'
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, 'ঢাকা ওয়াসার খাল প্রকল্প নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা মনে করছি এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এখন নতুন করে খাল উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করছি।'
সম্রাট/নির্জন
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন