• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
অসহযোগ আন্দোলন

রাজধানীসহ সারা দেশে ৯১ জন নিহত

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম

রাজধানীসহ সারা দেশে ৯১ জন নিহত

সিটি নিউজ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১-এ।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৬ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৯১ জন নিহত হয়েছেন। 

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগের প্রথম দিনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে 

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৫ জন, বগুড়ায় ৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৪ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১ জন, ধামরাইয়ে ১ জন, ও বরিশালে ১ জনসহ ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। 

নরসিংদীতে  আওয়ামী লীগের 

৬ নেতাকর্মী নিহত

নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হন আরও অনেকে। রোববার দুপুর একটার দিকে মাধবদী বাজার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মাধবদী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন (৪০), মাধবদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (৩৮), নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), মহিষাশুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল (৪০), কামাল হোসেন (৩৫), মো. সোহেল মিয়া (৩৮)। ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান।

সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ 

মোট ২২ জন নিহত

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করে ১২ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনকারী, বিএনপি ওজামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদর দপ্তর এবং রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইডি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন।

রাজধানী ৫

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। 

জিগাতলায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। 

আব্দুল্লাহ পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তার বাবার নাম আবু বকর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।

এদিকে মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে মিরাজ হোসেন (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজমল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অন্দিরা সমকালকে জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবক মারা যান। তিনি মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে থাকতেন। 

বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায়। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে মিরপুরে সংঘর্ষ চলাকালে মিরাজ হোসেন (২৩) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজমল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অন্দিরা সমকালকে জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবক মারা যান। তিনি মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে থাকতেন।  

অপরদিকে বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ছবি: সমকাল

মুন্সীগঞ্জ ৪

মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল চত্বরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে রোববার সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মেহেদি হাসান (৩২), মো. সজল (২২)। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেল।

রংপুর ৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরের রাজপথে মানুষের ঢল নামে। সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে সিটি বাজারে সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন।

মাগুরা ৩

মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হন। এ সময় ফরহাদ হোসেন (২৩)। তার বাবা রাম গোলাম রসুল। ফরহাদ শ্রীপুরের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা। এ সময় রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন।

কুমিল্লা ৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। এছাড়াও দুই পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছে। 

পাবনা ৩

পাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম রিমন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও পাবনা শহরের আরিফপুর হাজীরহাট এলাকার মাহিবুল হোসন (১৬)।

সিলেট ৪

সিলেটের গোলাপগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোক। 

রোববার দপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গুলিতে তারা নিহত হন। নিহতরা হলেন-ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আর্কাইভ