প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৪, ০২:১০ পিএম
বর্বরতা কোনো আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত করে বের করা হবে কারা এসবে জড়িত৷ সেই তদন্তে জাতিসংঘসহ যে কোনো দেশ চাইলে অংশ নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার মতো শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়নি৷ আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব কেন? আমি তো সব হারিয়েই দেশের মানুষ নিয়ে বেঁচে আছি৷ বার বার আমাকেই টার্গেট করেছে হত্যা করার জন্য৷ এসব ভয় না পেয়ে, দেশের জন্য কাজ করে গেছি৷ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ও অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে৷ বর্বরতা কোনো আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না। ধ্বংস্তুপ বানিয়ে গাজার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এরা৷ এদের বিচার একদিন হবে৷ এজন্য সুষ্ঠু বিচার দরকার৷ আন্তর্জাতিক তদন্তটা আমি চাই।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে জাতির পিতাকে হত্যার পর, পথ চলেছে আওয়ামী লীগ৷ বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তবে বিচারহীনতার পরিবেশ থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনার কাজটাও আওয়ামী লীগই করেছে৷
মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বড়-বড় দেশ আমাদেরকে সাপোর্ট করেনি৷ সেভেন ফ্লিটও পাঠানো হয়েছিলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর)৷ স্বাধীনতার পর ব্যঙ্গ এদেশকে নিয়ে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো৷ তাদের ব্যঙ্গকে মিথ্যা করে, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছি৷ এ অর্জনটা কিন্তু হয়েছে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজ যারা ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী তারা তো জানে না যে, আগের সময়টা কেমন ছিল। আজ পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডুকতা দিয়ে কিন্তু সকলের অজান্তেই একটা গোষ্ঠী বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ছিল। পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে তারা৷ তাদের সবশেষ আঘাতটা দেখা গেল কোটা আন্দোলনের নামে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনে জঙ্গি ঢুকে হত্যাযজ্ঞ ও মানুষের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হেনেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ মেনে নেয়া হলেও, এ আন্দোলন কার স্বার্থে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রশ্ন তার।
কোটা আন্দোলনে ঝাঁকে-ঝাঁকে মানুষ হাজির হওয়া শুরু করল৷ তখন আমি ভাবনায় পড়লাম৷ এত শিক্ষার্থীর তাহলে কী হবে৷ তারা তো কোনো কথাই শুনছে না৷ তারা যা চাইলো, তার চেয়েও বেশি পেল আদালতের মাধ্যমে৷ তারপরও তাদের আন্দোলন ও দাবি কোনোটাই থামে না৷ তাদের সেই তাণ্ডব দেখা গেল গোটা দেশজুড়ে৷ জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা জিনিসগুলোর ওপরই আঘাত করা হলো কেন? কতগুলো প্রাণ ঝরল উল্লেখ করেন তিনি।
অস্ত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত মানুষ-ওরা কারা? মেয়ে হয়ে মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে পাকিস্তানি হায়েনাদের মত৷ এ কেমন বর্বরতা এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি শতভাগ মেনে নেয়া হলেও এই আন্দোলন কার স্বার্থে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে? কতগুলো প্রাণ ঝরে গেল! পুলিশের ওপর আক্রমণ, মসজিদের মাইকে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে মানুষ ডেকে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা৷ এ পর্যন্ত অনেক মৃত্যুর খবর আপনারা পাচ্ছেন, জানছেন৷ এবারও ২০০ মানুষ মারা গেল৷ কতগুলো প্রাণ, শিশুদের প্রাণ গেল৷ এগুলোর পাশাপাশি মিথ্যাচারও ছিল৷
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আমাকে ফোন করেছিল৷ তাকে উদ্ধার করার জন্য৷ তাণ্ডব চালানো হলো বিভিন্ন জায়গায়-এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন বর্বরতা আবার কোন ধরনের আন্দোলন? এটাকে আবার সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের কিছু জ্ঞানীগুণীরা৷ তারা কিসের সমর্থন দিচ্ছেন? দাবি যা ছিল, তা তো পূরণ হয়েছে৷ আমি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণেই অভিভাবকদের সতর্ক করেছিলাম যে, সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি আছে এখানে৷ জিনিস গেলে ফেরৎ পাওয়া যায় কিন্তু জীবন গেলে তা আর ফেরৎ আসে না৷
তিনি আবারও বলেন, এত শ্রম দিয়ে দেশটাকে একটা স্তরে নিয়ে এসেছিলাম, সেই দেশ নিয়ে এখন বিদেশে কত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷ দেশের উন্নয়ন করা কী অপরাধ? দেশ নিয়ে আজ জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে৷ আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে এসব ঘটনার৷ জাতিসংঘসহ অন্য কোনো দেশ চাইলে, তারাও তাদের টিম পাঠাতে পারে৷ বের করতে হবে এর পেছনে কারা? যারা অপরাধী তাদের ধরতে হবে৷ কেননা, আমরা বানাবো আর কেউ শুধু ভেঙে তামা তামা করবে, তা হয় না৷ কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে ভয়াল থাবা দেখাল তারা৷
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জায়গা বাংলাদেশে হতে পারে না৷ এদের মূলশক্তি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে৷ এরা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালাবে৷ সবাইকে একসঙ্গে হয়ে তাদেরকে পরাস্ত করতে হবে৷ শোকের মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই শোক পালনের পাশাপাশি মানুষের পাশে থাকবেন৷ সামনে ঝড়-বন্যা যাই আসুক, মানুষকে সাহায্য করে যেতে হবে৷