• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
কোটা সংস্কার আন্দোলন

শাপলা চত্বরে নটর ডেম শিক্ষার্থীদের অবরোধ

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম

শাপলা চত্বরে নটর ডেম শিক্ষার্থীদের অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে তারা শাপলা চত্বর কেন্দ্র করে জড়ো হতে থাকে। শাপলা চত্বর কেন্দ্র করে চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে তারা।

জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়, ‘চেয়েছিলাম অধিকার-হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা-দেশটা কারও বাপের না’, ‘তুমি নও আমি নই-রাজাকার রাজাকার’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার-তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘এসো ভাই এসো বোন-গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’

কথা হয় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদের সঙ্গে। সে বলে, গতকাল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আমাদেরই ভাই-বোন। তাদের রক্তের দাগ বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় না হলে রাজপথ ছাড়ব না।

আরেক শিক্ষার্থী বলে, এই দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আমরা তাই সবাই রাজপথে নেমেছি। দাবি আদায় করেই রাজপথ ছাড়ব।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানীর রামপুরা-বিশ্বরোড সড়কের নতুনবাজার, মেরুলবাড্ডা, বনানী, সায়েন্সল্যাব মোড়, আশুলিয়া-গাবতলী-ধউর, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ী ধনিয়া কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ রেখেছেন তারা।

বেলা বেলা ১১টার পর থেকে এসব সড়কে অবস্থান নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন।

সময় সংবাদের প্রতিবেদরা জানান, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম-এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল, ইস্টার্ন, সিটি, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর এসব সড়ক অবরোধ করেছেন।

এর আগে সোমবার দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর রাতে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবারের (১৬ জুলাই) কর্মসূচি ঘোষণার পর গণআন্দোলনের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।

কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।

দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

আর্কাইভ