• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ফার্মগেট অভিমুখে

প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৪, ১২:০০ পিএম

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ফার্মগেট অভিমুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিতে রোববার ‘বাংলা ব্লকেডে’ স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। একইভাবে সোমবারও (৮ জুলাই) কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৩টার পর থেকে সড়কে অবস্থান নেবেন তারা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার (৭ জুলাই) দেশব্যাপী বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবারও শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

রোববার এ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকার বড় অংশ। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
এ আন্দোলনের সমন্বয়করা এ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, রোববার শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি। সোমবার ফার্মগেট পার হয়ে যাব। বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীদের জমায়েত হবেন।

এবার ‘সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের’ এক দফা দাবিতে তারা কর্মসূচি পালন করবেন। এ বিষয়ে সংসদে আইন পাসেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা সারাদেশে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান। পরে তারা শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে দীর্ঘক্ষণ অচল থাকায় সড়কে হাজারো গাড়ির জটলা বাঁধে যায়। যা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের গলদঘর্ম হতে হয়। আর ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ।  

রোববার বিকেল ৩টার পর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
 
একে একে শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়, বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজার মোড়, হাতিরঝিল, হাতিরপুল, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব মোড়, চানখারপুল অবরোধ করেন তারা। এতে এসব এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে পুরো রাজধানীতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষ।

এর আগে বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন তারা। প্রতিটি হল ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা গ্রন্থাগারের দিকে আসতে থাকেন। আন্দোলনকারীরা গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে শাহবাগে গিয়ে জড়ো হন। এরপর তারা সেখানে অবরোধ করেন। এদিকে আজিমপুর-নিউমার্কেট মোড়ও অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা বন্ধ করে চানখারপুলে আন্দোলনকারীরা সড়কে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে প্রতিবাদ জানান।

বাংলা ব্লকেডে রাজধানীর সড়কগুলো বিকেল থেকে অচল হয়ে পড়লে মেট্রো স্টেশনগুলোতে বাড়ে ভিড়। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি যাত্রীর ভিড়ে স্টেশনগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ঠাসাঠাসি করে কোনোরকমে যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা চালান। এ সময় ভিড় সামলাতে মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।  

মিছিল ও অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা ‘অবরোধ-অবরোধ-সারা বাংলা অবরোধ’, ‘এক দফা এক দাবি-কোটা নট কামব্যাক’, ‘বাধা দিয়ে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না’, ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ’১৮ এর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে-ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচিও পালন করছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানান। এগুলো হলো: ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুতসময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে৷

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে, এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন।
এর আগে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আর্কাইভ