প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের চারদিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছেন।
শুরুতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামন থেকে বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে যায়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অপরদিকে আন্দোলনে বাধা না দিলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হয়েছেন।
মিছিল শেষে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এরপর একে একে শাহবাগ মোড়ের চারটি রাস্তা বন্ধ করে দেন।
এর আগে গতকাল (৬ জুলাই) কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, রোববার বিকাল ৩টায় সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে। ঘোষণা অনুযায়ী, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিকাল ৩টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। যদিও নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পরে তারা অবস্থান নেন।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শনিবার বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রতিটি পয়েন্ট অবরোধ করা হবে। এসব পয়েন্টে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবে। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করবেন তারা। আর ঢাকার বাইরে যেসব শিক্ষার্থী আছেন আপনারা জেলায় জেলায় মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার মনে করেছে আমরা দুই-তিন দিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি, প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হবো।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি কেমন হতে পারে এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, বাংলা ব্লকেড মানে হলো, সারা দেশে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করবো, যাতে কোনো গাড়ি চলতে না পারে। শহরের যান চলাচল সারা দেশ ব্লক করার জন্য আমরা সম্ভাব্য সব রুট অবরোধ করবো। যদি জানতে পারি কোনও বিকল্প রুটে বাইপাস দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে, সেটিও অবরোধ করব।
এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় বন্ধ করে রাখায় শাহবাগের আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটাও বাতিল হয়। গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।
সর্বশেষ গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন।