প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পাঁচ ঘণ্টা ধরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর সড়ক, মতিঝিলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের অনেকেই হেঁটে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হয়।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য ঘুরে শাহবাগ এসে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
স্বাভাবিক সময়ে মোটরসাইকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট যেতে পনের মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু আজ বিকেল ৩টার দিকে এই পথ যেতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগার কথা জানালেন এক ভুক্তভোগী। রাজধানীর অন্যান্য অংশের অবস্থাও একই রকম বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান। অবশ্য মোটরসাইকেল আরোহীদের চেয়ে বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।
হলিক্রস কলেজের শিক্ষার্থী অনামিকা বলেন, পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় তীব্র যানজট। ইচ্ছে ছিল দ্রুত বাসায় গিয়ে রেস্ট নেবো। যানজটের কারণে সেটা হচ্ছে না।
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাকিব হাসান বলেন, সকাল থেকে প্রচণ্ড যানজট শুরু হয়েছে। হয়তো শাহবাগের প্রভাবে যানজট সারা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এত যানজট আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।
কাওরানবাজারে বিকল্প পরিবহনের বাসচালক বাবু বলেন, কয়েক দিন ধরে শাহবাগ আন্দোলনের কারণে রাস্তায় জ্যাম বাড়ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদের আয় কম হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থাকতে হয়। অনেক যাত্রী পায়ে হেঁটেই চলে যাচ্ছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। সারাদেশের ছাত্রসমাজ আজ জেগে উঠেছে। শাহবাগ, সাইন্সল্যাব রোড এবং মেট্রোরেল বন্ধ করতে পারলে এই আন্দোলন সফল হবে।
জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ৫ জুন সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের দাবি মূলত তিনটি ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটা পুনর্বণ্টন বা সংস্কার; চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার অভিযোগ করেন।
ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।