প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
হত্যার জন্য ৪-৫ জনের একটি ভাড়াটে টিম মাঠে নেমেছে জেনে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। শনিবার (২৯ জুন) রাতে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় এ জিডি করেন তিনি।
রোববার (৩০ জুন) আদালত পাড়ায় সময় সংবাদের কথা হয় ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি হত্যার হুমকি, ভাড়াটে খুনি, রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
ভাড়াটে ‘কিলারদের’ কীভাবে জানতে পেরেছেন, এমন প্রশ্নে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘অনেকেই আমাকে অনেকেবার থ্রেটের কথা বলেছেন, আমি কখনও আমলে নিইনি। এবার আমার থানার ওসি আমাকে জানিয়েছেন যে তাকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি জানিয়েছে একটা থ্রেট আছে। চার-পাঁচজনের একটা কন্ট্রাক্ট কিলার গ্রুপ কন্ট্রাক্ট করে আসছে। এদের উপরে কিছু লোকজন আছে, যারা তাদেরকে হায়ার করছে।’
অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি সিলেটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ওসি আমাকে বিষয়টি জানান এবং ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানান, হত্যাকাণ্ডের লিস্টে আমার নাম শোনার পর তিনি ওই জায়গা থেকে চলে এসেছেন। এটা জানার পর তো আর বসে থাকা যায় না। সবকিছু জেনে পরদিনই আমি সংসদে চলে আসি এবং শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করি।’
সুমন বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ওসি সাহেব খবরটা পেয়েছেন দুদিন আগে। ওনার তো তৎক্ষণাৎ এসপি সাহেবকে জানানোর কথা। এসপি সাহেবের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা। আমার জিডি করা লাগল কেন?’
‘একমাত্র আইজিপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলার পর দেখি উনি আমার মতোই চিন্তা করেছেন যে আমার তো জিডি করারই প্রয়োজন ছিল না। এটা পুলিশেরই ব্যবস্থা নেয়ার কথা,’ যোগ করেন তিনি।
‘আমার প্রশ্ন জাগছে: রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু কিছু মানুষ আসলেই চাচ্ছেন কি না, আমি বেঁচে থাকি।’
এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় আমাদের এলাকায় শাহ এএমএস কিবরিয়া মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। আমার বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে একটা অপমৃত্যুর রেকর্ডের জন্য লোকজন বসে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলাম। এখন মেম্বার অব পার্লামেন্ট। সবকিছু বিবেচনায় আমার সিকিউরিটির যে অবস্থা, যারা আমাকে সিকিউরিটি দেন, তারা কী চাচ্ছেন তা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।’
জিডির পর আপনি বা আপনার পরিবার শঙ্কিত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পরিবার শঙ্কিত। আমার ১১ বছরের মেয়ে বলে: দেয়ার মাস্ট বি এ লাইন বিটুইন গুড ওয়ার্ক অ্যান্ড স্টুপিডিটি। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি গুড ওয়ার্ক করি এ জন্য ব্যাড লোকেরা আমাকে থ্রেট দেয়। এ জন্য তার মাথায় হতো আছে এ দেশে দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে, ভালো কাজ করলে–এটা একটা স্টুপিডিটি।’
‘এ হুমকির পরও আমি ভেঙে যাইনি। মৃত্যু তো অবধারিত। একসময় না একসময় মরতেই হবে। কিন্তু আমি হঠাৎ করে মরে গেলে আমার আনফিনিশিড যে জবগুলো আছে বা পরবর্তী জেনারেশন কোনোভাবেই যেন উৎসাহ না হারায়, সে জন্য আমাকে মেরে ফেললেও আমি দেশ ছাড়ব না, কাজও বন্ধ করব না,’ যোগ করেন সুমন।
তিনি বলেন, ‘আগের নেতারা এসব বন্ধ করেছে বলেই তো বেনজীর-মতিউরের মতো লোক তৈরি হয়েছে। পুলিশ খবরই পায় না কে কারে কখন থ্রেট দেয়–এসব কারণেই তো বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হয়।’
হুমকির বিষয়টি স্পিকারকে জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘এখনও জানাতে পারিনি। বাজেট অধিবেশনের কারণে সুযোগ পাইনি। আর ওনাকে বললে উনি তো পুলিশ বিভাগকে বলতে বলবেন। উনি নিজে তো আর তদন্ত করবেন না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এমপি আনার হত্যার অভিযোগে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো মারা যাওয়ার পর সব অপরাধী ধরা পড়বে।’
এখন নিরাপত্তা চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, ‘নিরাপত্তা আমি চাই না। আমি চাই সবাই নিরাপদ থাকুক। আমি নেতা হয়ে নিরাপদ থাকলাম, অন্যরা অনিরাপদ–এমন নিরাপত্তা আমি চাই না। আমি নিরাপত্তা চাই না, আমি চাই নিরাপদ হোক পরিবেশ। যার যে দায়িত্ব তা সে পালন করুক। তাতে যদি আমার নিরাপত্তা দেয়া প্রয়োজন পড়ে দেবে, আর যদি মনে করে নিরাপত্তা না দিয়ে আমাকেকে নিরাপদ রাখবে–দ্যাট’স এনাফ।’
‘মূল কথা হচ্ছে, আপনারা আপনাদের কাজ করেন, আমাদের কাজ আমাদের করতে দেন।’