• ঢাকা শনিবার
    ২৯ জুন, ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১
লাভের মুখ দেখেননি বিক্রেতারা

সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারে ধসের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম

সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজারে ধসের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

এবারও যৌক্তিক মূল্যে কেনাবেচা হয়নি কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। প্রতিবছরের মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার ধস নামানোর অভিযোগ উঠেছে। বাজার ধসের কারণে মৌসুমি বিক্রেতারা লাভের মুখ দেখেননি। অধিকাংশ স্থানে ছাগলের চামড়ার দামই মেলেনি। কুরবানিদাতার কেউ কেউ রাগে-ক্ষোভে ছাগলের চামড়া নদীতে ফেলছেন। প্রায় ১০ হাজার পিস পশুর চামড়া ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়। অথচ ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ শিল্পে বেড়েছে রপ্তানি আয়।

এদিকে ঈদের তৃতীয় দিনেও সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীতে চামড়া আসছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) দাবি ট্যানারিগুলোতে এরই মধ্যে ৫ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বছর তাদের ৮০ লাখ পিস কুরবানির চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার প্রতিরোধে জয়পুর হিলি সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্কাবস্থান নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

রাজধানীজুড়ে কুরবানির পশুর চামড়ার বড় অংশ বিক্রি হয় পুরান ঢাকার পোস্তায়। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে এ এলাকায় আসতে শুরু করে পশুর চামড়া। সাভারের হেমায়েতপুরে তৈরি হয়েছে আরেকটি ট্যানারি শিল্প এলাকা। গত কয়েক বছরে সেখানেও বেড়েছে বেচাকেনা।

এ বছর নির্ধারিত দামের চেয়ে একটি চামড়া গড়ে ২৭৫-৩০০ টাকা কমে মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনছেন আড়ত মালিকরা। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনতে অনীহা ছিল। সর্বোচ্চ ১০ টাকা মূল্য দেওয়া হয় একটি ছাগলের চামড়ার। সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ গড়ে ২৯০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৫ টাকা থেকে ১২১০ টাকা।

সেখানে ঈদের দিন বড় ও মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজধানীর হাজারীবাগ বাজার এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বড় ও মাঝারি আকারের চামড়া ৭০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী এবার পোস্তায় এক লাখ পিস পশুর চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

মূল্যহীন ছাগলের চামড়া এবং বেঁধে দেওয়া থেকে কম মূল্যে গরুর চামড়া কেনার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মাচের্ন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবতাব খান জানান, ৪২টি ছাগলের চামড়া শিল্প থেকে এখন ৪ থেকে ৫টিতে নেমে আসছে। এছাড়া ছাগলের চামড়া কুরবানিদাতা নিজেই মাংস থেকে পৃথক করে থাকেন। এতে চামড়ার প্রকৃত সাইজ কমে যায়। মূলত এই তিন কারণেই ছাগলের চামড়ার মূল্য কমছে। তিনি আরও বলেন, লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য সরকার বেঁধে দিয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা করবেন বেঁধে দেওয়া মূল্যের নিচে। বিশেষ করে লবণ মেশানোসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় প্রতিটি চামড়ার বেঁধে দেওয়া মূল্য থেকে ২৯০ টাকা কমে কেনাবেচা করতে হবে। সেটি করলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন। 

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর চামড়ার সরবরাহ ভালো। আমরা পোস্তার ব্যবসায়ীরা ১ লাখ ৬০ হাজার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিলাম। আশা করছি, সেই পরিমাণ চামড়া কিনতে পেরেছি।

হাজারীবাগ সনাতনগড়ের তানভির আহমেদ নামে এক মৌসুমি ক্রেতা জানান, বড় গরুর চামড়া প্রতিটি ৮০০-৯০০ টাকা, মাঝারি ৬০০-৭০০ টাকা এবং ছোট গরুর চামড়া ২০০-৩০০ টাকায় কিনছেন। কুরবানিদাতা মাহফুজুর রহমান জানান, দেড় লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া মাত্র ৬০০ টাকা দিয়েছে মৌসুমি ক্রেতা। 

এদিকে পুরান ঢাকার পোস্তায় খাসির চামড়া ১০ টাকা করে কেনাবেচা হয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫-৬০ টাকা এবং মফস্বলের জন্য ৫০-৫৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা বেশি। এছাড়া খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা এবং বকরি ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির ১২-১৪ টাকা। চামড়া খাতের একাধিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কুরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ